দাতাদের সঙ্গে নতুন বেইলআউট চুক্তি অথবা ব্যাংক খাতে ধস এবং একক মুদ্রা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সূচনা- এ দুটির যে কোনোটি বেছে নিতে গ্রিসকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন ইউরোজোনের নেতারা।
Published : 08 Jul 2015, 03:15 AM
নতুন বেইলআউটের জন্য আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে নতুন করে প্রস্তাব উত্থাপন করতে বলা হয়েছে গ্রিসকে। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রোববার ইইউর পূর্ণাঙ্গ সভা ডাকা হয়েছে।
মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইউরোজোনের নেতাদের বৈঠকের পর ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, ‘ইউরোজোনের ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল সময়’ পার করছেন তারা।
“এই সপ্তাহেই চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হচ্ছে।”
২৪০ বিলিয়ন ইউরোর বেইল আউটের (আর্থিক পুনরুদ্ধার সহায়তা) মেয়াদ গত সপ্তাহে শেষ হওয়ার আগে নতুন বেইল আউটের জন্য গ্রিসকে ট্যাক্স বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় হ্রাসসহ বেশ কিছু কঠোর শর্ত দেওয়া হয়।
দাতাদের দেওয়া কঠোর ব্যয় সংকোচনের ওই প্রস্তাব রোববার গণভোটে প্রত্যাখ্যান করে গ্রিসের জনগণ।
এরপর মঙ্গলবারের এই বৈঠকে গ্রিসকে নতুন প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছিল। তবে সেখানে কোনো লিখিত পরিকল্পনা তোলেননি তারা।
দেশের ব্যাংকগুলো টাকার অভাবে পড়ার আগে ইউরোজোনের এই বৈঠকে শেষ মুহূর্তের ‘পুনরুদ্ধারের’ বিষয়টি বিবেচনার প্রতিশ্রুতি চান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস।
এরপর রোববার নতুন বৈঠকের সূচি রেখে তার আগে ঋণ ও দেশের আর্থিক সংস্কার নিয়ে গ্রিসকে নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করতে বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা।
গ্রিসের ঋণ আবেদন ও সংস্কারের অঙ্গীকারে দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সন্তুষ্ট হলেই রোববার দেশটির জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন হতে পারে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি বলেছেন, “বল এখন গ্রিসের কোর্টে। গ্রিস নিয়ে আগামী রোববার চূড়ান্ত বৈঠক হবে।.. আমি হতাশাবাদী নই।”
এথেন্সের সঙ্গে সমঝোতা শুরুর কোনো ভিত্তি এখনও হয়নি ঘোষণা দিয়ে এই বৈঠকে আসা জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সুরও কিছুটা নরম হয়েছে। শেষ মুহূর্তের সমঝোতায় পৌঁছাতে তিনিও সক্রিয় বলে ইউরোজোনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আগামী রোববারের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব নেতাকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “ইউরোর জন্য আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।”
‘সন্তোষজনক’ প্রস্তাব নিয়ে এলে এবং দাতাদের বোঝাতে পারলে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পেতে পারে গ্রিস।
তবে অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর ওয়েরনার ফেম্যান সতর্ক করেছেন যে, রোববার কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে ইউরোজোনের সরকারগুলোর ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে এগোতে হবে; যাতে ইউরো ব্যবহারের সুযোগ হারাবে গ্রিস এবং এই একক মুদ্রার এলাকা থেকে নিজেদের বাইরে দেখবে তারা।
তারল্য সংকটের মুখে থাকা গ্রিসের ব্যাংকগুলোকে টাকাহীন হয়ে পড়া থেকে বাঁচাতে দ্রুত নতুন ঋণ অনুমোদনের জন্য ইউরোজোনের নেতাদের রাজি করানোর চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস।
গ্রিসের আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা না পেলে দুই দিনের মধ্যে ব্যাংকগুলোতে টাকার অভাব শুরু হতে পারে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে গ্রিসকে বাঁচানোর জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন ইউরোজোনের প্রভাবশালী দুই সদস্য জার্মানি ও ফ্রান্স।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদের পরিকল্পনায় একটি গ্রিসের জন্য মধ্যমেয়াদি শর্তসাপেক্ষ কর্মসূচি এবং অল্প কয়েক মাসের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি ঋণ সহায়তা চুক্তি রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
তবে সব কিছুই নির্ভর করছে আর্থিক খাত পুনর্গঠন নিয়ে গ্রিস কী প্রস্তাব দেয় তার উপর।