উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর অতীত বিশ্লেষণ

ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের তলদেশে পাওয়া ফসিল থেকে উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর অতীত বিশ্লেষণে গবেষণা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2015, 06:40 AM
Updated : 31 March 2015, 06:40 AM

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর আচরণ কেমন ছিল আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এতে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে- সেই বিষয়ে আলোকপাত করাই গবেষণাটির উদ্দেশ্য।

উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ু এশিয়ার বৃহত্তর মৌসুমী বায়ুর একটি অংশ। বসন্তের শেষ দিকে সূর্যের তীব্র তাপে উত্তর ভারত মহাসাগর থেকে শুরু করে উত্তর ভারতের সমভূমিগুলো ও তিব্বত মালভূমি উষ্ণ হয়ে ওঠে। এই উষ্ণতা থেকেই মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি।

এই বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশসহ ভারত ও সংলগ্ন এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ৭৫ ভাগ জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়ে থাকে।

জলবায়ুর ধারা বিশ্লেষণ করে উপমহাদেশে মৌসুমী বৃষ্টিপাত প্রতি বছর পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। বিষয়টি এই অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে পারে। 

পৃথিবীর ইতিহাসজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়টি যা প্যালিওক্লাইমেটোলজি নামে পরিচিত, ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী কেমনভাবে সাড়া দিতে পারে তা নির্ধারনের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিতে পারে। 
এই প্যালিওক্লাইমেটোলজি’র অংশ হিসেবে উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর অতীত নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। 
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সমুদ্র গবেষণা কর্মসূচির উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। 
এদের একটি বৈজ্ঞানিক ড্রিল জাহাজ বর্তমানে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে কাজ করছে। 
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল বিভিন্ন জায়গায় সাগরের গভীর তলদেশ থেকে কাদা সংগ্রহ করছে। এই কাদার মধ্যে ফসিল হয়ে থাকা ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীবেরা যখন জীবিত ছিল, তখন এই এলাকার ও বৈশ্বিক জলবায়ু কেমন ছিল তা বের করতে সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। 
সাগরের তলদেশ খুঁড়ে বের করা এসব ফসিল লাখ লাখ বছর ধরে চলা বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিমাণ নির্ণয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। 
ওই জাহাজে থাকা গবেষক এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কেট লিটলার জানিয়েছেন, উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ু কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে এই গবেষণা থেকে তা ভালোভাবে বোঝা যাবে।
তিনি বলেন, “৮০ লাখ বছর আগে উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ু যখন তীব্র হয়ে উঠেছিল, সেই সময় থেকে এর পুরো বিবর্তনের প্রক্রিয়াটি আমরা উদ্ধার করতে চাই।”  
“সাগরের গভীর তলদেশের এই কাদা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সূদুর অতীতে উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর আচরণ কেমন ছিল, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করতে পারবো আমরা। এভাবে এই বায়ুর আচরণ ও তীব্রতা ভবিষ্যতে কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে সেই ধারণাও করা যাবে।” 
“এসব তথ্য মৌসুমী বায়ুর অতীত আচরণ সম্পর্কে আমাদের একটি সামগ্রিক ধারণা দেবে,” বলেছেন লিটলার। 
এসব নমুনার কিছু কিছু এমন জায়গা থেকে নেয়া হয়েছে যেখানে এর আগে কখনোই ড্রিল করা হয়নি। সংগ্রহ করা কাদার অন্যান্য অংশের মধ্যে অগ্ন্যুৎপাতের ছাইয়ের নমুনাও আছে। প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে মিলাতে পারলে এ থেকে কাদার বয়সও নির্ণয় করা যেতে পারে। 
এভাবে রাসায়নিক, প্রাণী ও জীববৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে বের করা তথ্যানুযায়ী উপমহাদেশের মৌসুমী বায়ুর চক্রটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতীতের বিভিন্ন সময়ে কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল তা বোঝা যেতে পারে।