হংকংয়ে আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারি

হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন দখলের হুমকি দেয়ার পর তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে পুলিশ।

>>রয়টার্স
Published : 2 Oct 2014, 04:11 PM
Updated : 2 Oct 2014, 05:08 PM

ওয়াশিংটনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি হংকং পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলার পর বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে এ হুঁশিয়ারি এল। এছাড়া রাজপথ দখল করে থাকা বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফেরারও নির্দেশ দেয় তারা।

২০১৭ সালে হংকংয়ের পরবর্তী নেতা নির্বাচনে চীনের প্রার্থী বাছাই পরিকল্পনায় হংকংয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। সে সূত্র ধরেই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজপথ ও বিভিন্ন চত্বর দখল করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে হংকংয়ে চীনের আধিপত্য বিরোধীরা।

বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবারের মধ্যে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী সি লেয়ুঙ এর পদত্যাগ দাবি করেছে। অন্যথায় সরকারি ভবনগুলো দখল করার হুমকি দিয়েছে তারা। এরপরও পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন সি লেয়ুঙ।

হংকং পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তা স্টেভ হুই বলেন, বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

“যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো জনশক্তি পুলিশের রয়েছে বলে আমরা হংকংবাসীকে নিশ্চিয়তা দিচ্ছি।”

গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে পুলিশ তা দমাতে টিয়ার গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। তবে আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও পরবর্তী কিছুদিন ধরে পুলিশ সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।

ছয়দিন আগে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরুর দিনই রাজপথে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কিছুটা কমে যায়।

অনেক বিক্ষোভকারী জানায়, শুক্রবার তারা কাজে ফিরে যাবে। তবে যে দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে তাতে তাদের সমর্থন থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাতেও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লেয়ুঙয়ের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের সামনে দাঙ্গা পোশাক পরে অবস্থান নিয়েছিল প্রায় শতাধিক পুলিশ।

তবে সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত মনে হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদক ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন।

১৯৯৮ সালে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর থেকে চীনের অধীনে ‘এক দেশে দুই পদ্ধতি’ নীতিতে হংকংয়ের প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে।

মূল চীনের তুলনায় কিছুটা গণতান্ত্রিক নীতিতে হংকংয়ের সরকার নির্বাচিত হলেও এতে চীনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বেইজিংয়ের পছন্দের প্রার্থীকেই নেতা (প্রধান নির্বাহী) নির্বাচন করতে হচ্ছে হংকংবাসীকে।

ওদিকে, আগেকার পরিস্থিতি শিথিল করে চীনের পছন্দ করা চারজন প্রার্থীর মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের সুযোগ রেখে ২০১৭ সালের ভোটের আয়োজন চলছে।

ওই ‘অগণতান্ত্রিক’ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে উন্মুক্ত প্রার্থীতার সুযোগ রেখে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতেই আন্দোলন শুরু করে গণতন্ত্রকামীরা।

সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই হংকংয়ে প্রতিবাদ শুরু হয় যা শুক্রবার থেকে গণবিক্ষোভের রূপ নেয়। গত পাঁচদিন ধরে হংকং শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।

ছাড় দেবে না চীন:

হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলেও ওই অঞ্চলের ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ নতুন কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে বেইজিংয়ের শাসকরা ইঙ্গিত দিযেছেন।

মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হংকং বেইজিংয়ের প্রভাবে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন।

বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, “হংকং ও ম্যাকাওয়ের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিক সমৃদ্ধি রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর।”

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থানরত ওয়াং হংকংয়ের ঘটনাকে চীনের “অভ্যন্তরীণ বিষয়” বলে দাবি করে বলেন, “চীনের স্বার্বভৌমত্বের প্রতি সব দেশের শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। কোনো দেশের, কোনো সমাজের জন্য, কেউ আইন-শৃঙ্খলা অমান্যকারী এ ধরনের অবৈধ কার্যকলাপকে অনুমোদন করবে না।”