পাকিস্তানে নওয়াজের বাড়ির পথে আন্দোলনকারীরা

পাকিস্তানের সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা রাজধানী ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছাকাছি চলে গেছে।

>>রয়টার্স
Published : 1 Sept 2014, 08:26 AM
Updated : 1 Sept 2014, 10:10 AM

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে তাদের এই বিক্ষোভ।

পাশাপাশি সোমবার আন্দোলনকারীরা দেশটির জাতীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার বেশকিছুক্ষণ পর নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপে সেটি আর তার কার্যক্রম শুরু করেছে।

সপ্তাব্যাপী আন্দোলন-বিক্ষোভের পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে বিক্ষুব্ধরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।

ভিডিওফুটেজে দেখা গেছে, বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীরা ইসলামাবাদের কেন্দ্রীয় এলাকায় দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভির সদরদপ্তরের প্রবেশ দ্বার ভেঙে ভেতরে প্রবেশের পর সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেখানে ঢুকছে।

“তারা পিটিভি কার্যালয়ে পাথর ছুঁড়ছে” একজন সংবাদপাঠক এই খবর জানানোর সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনটির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়, এবং পর্দা কালো হয়ে যায়।

এরআগে ওই সংবাদপাঠক জানিয়েছেন, “পিটিভি’র কর্মী ও সাংবাদিকেরা যারা দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের মারধর করা হচ্ছে।”

অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছাকাছি যেতে চাইলে পুলিশ কাঁদুনেগ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।

তবে এ সময় প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ বাসভবনে অবস্থান করছিলেন কিনা তা পরিষ্কার নয়।

এরআগে শনিবার রাতভর এ সংঘর্ষে পুলিশ লাঠি পেটা থেকে শুরু করে কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেটও ব্যবহার করেছে। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ৩ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।

ওই ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে অন্ততপক্ষে তিনশ জন আহত হন।

রোববারও সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। তবে সোমবার ভারী বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা পাকিস্তানের সচিবালয় এলাকার প্রধান ফটক ভেঙে ফেলে।

এই এলাকাতেই প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের বাসস্থান।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধান ও অপর এক জ্যেষ্ঠ পুলিশকর্মকর্তা সামান্য আহত হয়েছেন।

সাবেক ক্রিকেটার ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ইমরান খান ও পিএটি দলের নেতা তাহির-উল-কাদরি আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

২০১৩’র সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে শরিফ ক্ষমতায় এসেছেন বলে অভিযোগ করেছে দল দুটি। নৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই দাবী করে শরিফের পদত্যাগ দাবী করছে পিটিআই ও পিএটি।

দল দুটির দুই সপ্তাহ ধরে চলা সরকার বিরোধী আন্দোলন সত্বেও পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ।

রোববার সকালে নিজ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ইমরান আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দেশব্যাপী তার কর্মীদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, আজই লড়াইয়ের শেষ দিন।”

আন্দোলকারীদের থামাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেট ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান খালিদ খাত্তাক। পুলিশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা কুড়াল, তার কাটার কেচি এবং হাতুড়ি নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

সংঘর্ষে আহতদের ইসলামাবাদের দুটি প্রধান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসলামাবাদের পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, এখানে ভর্তি হওয়া আহতদের প্রায় সবাই রবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৫ জন নারী বলে জানিয়েছেন তারা।

ওদিকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে এবং পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর লাহোরেও সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

১৫ অগাস্ট থেকে ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে শিবির করে অবস্থান নিয়েছে পিটিআই ও পিএটি’র হাজার হাজার কর্মী। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না বলে দাবি করেছেন।

রাজধানীতে টানা এই সরকার বিরোধী অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকারের অনুরোধে সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী পক্ষ সেনাবাহিনী।

এতে পরিস্থিতি ব্যবহার বেসামরিক সরকারের উপর সেনাবাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতেই সরকারবিরোধী এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।

বেসামরিক কর্তৃপক্ষের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই এর উদ্দেশ্য। কারণ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছিলেন স্থানীয় ও বিদেশী পর্যবেক্ষকরা।