প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান ও পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিক (পিএটি) প্রধান তাহির উল কাদরি।
এদিকে ইসলামাবাদের রাজপথে হাজার হাজার সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের বসিয়ে রেখে দুদিন আগে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সরকার বিরোধী নেতা ইমরান খান ও তাহির উল কাদরি। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক মধ্যস্ততায় জড়িয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে তারা সরকার পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে।
তবে রোববার সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠক শেষে এমন সম্ভাবনার কথা নাকচ করে গণতান্ত্রিক সরকারকে সহযোগিতার ঘোষণা দেয় ওই বাহিনীর প্রচার বিভাগ (আইএসপিআর)।
শনিবার রাতে ইসলামাবাদের রাজপথ ও স্পর্শকাতর কূটনীতিক পাড়ায় (রেড জোন) অবস্থান নেয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বাসভবনের দিকে যাত্রা করে।
এসময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মধ্যরাত থেকে রোববার দিনের কিছু সময় পর্যন্ত বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
সংঘর্ষে পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও বিক্ষোভকারীসহ অন্তত চার শতাধিক মানুষ আহত হয়। এছাড়া এক নারীসহ তিন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।
আগের রাতে শত শত বিক্ষোভকারী আহত হলেও রোববার রাতে একই ঘটনা ঘটলে পুলিশকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন পিটিআই নেতা ইমরান খান। শনিবার পুলিশি অভিযানের সময় তার সমর্থকরা প্রস্তুত ছিলনা বলেও বিভিন্ন বক্তব্যে দাবি করেন তিনি।
সেনা বাহিনীর বিবৃতি
পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ওই বাহিনীর নিজস্ব প্রচার বিভাগের এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানায় তারা।
পাশাপাশি শনিবার রাতের অভিযানে শত শত মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় আইএসপিআর’র বিবৃতিতে।
কালক্ষেপণ না করে, অচিরেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করে সেনা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার হুমকির পরেও পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ।
আলোচনায় পিএটি এবং পিটিআই’র সঙ্গে সমস্যার সমাধানে আবারও সংলাপ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া মঙ্গলবার পার্লামেন্টে এনিয়ে একটি যৌথ সভাও আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী।
অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে সরকারের পতন দাবিতে রাজধানীমুখী শোভাযাত্রা (আযাদি মার্চ) শুরু করে পাকিস্তানের বিরোধী রাজনৈতিক দল পিটিআই ও কানাডা প্রবাসী ধর্মীয় নেতা তাহির উল কাদরির নেতৃত্বাধিন পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিক বা পিএটি।
গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে দাবি করে বিক্ষোভকারীরা। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পদত্যাগ এবং নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তারা।
ইসলামাবাদে প্রায় দুই সপ্তাহের গণঅবস্থানের পর শনিবার রাতে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের অভিমুখে রওয়ানা হলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বল প্রয়োগ করে পুলিশ।