রোহিঙ্গা ফাঁকি: মিয়ানমারে জনসংখ্যা কমেছে ৯০ লাখ

তিন দশকের মধ্যে করা প্রথম আদমশুমারির প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে মিয়ানমার, যেখানে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে আগের ধারণার চেয়ে ৯০ লাখ কম।  

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2014, 03:44 AM
Updated : 31 August 2014, 03:44 AM

দীর্ঘদিন স্বৈরশাসনে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সর্বশেষ আদমশুমারি হয় ১৯৮৩ সালে। মিয়ানমার সরকার বলে আসছিল, দেশের জনসংখ্যা ছয় কোটির মতো।   

তবে গত মার্চ-এপ্রিলে করা আদমশুমারির যে প্রাথমিক ফলাফল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছৈ ৫ কোটি ১০ লাখ।  

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করার কোনো সুযোগ আদম শুমারিতে দেয়া হয়নি।   

শুমারির প্রাথমিক ফল প্রকাশ করে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, আগামী বছর মিয়ানমারের জনসংখ্যার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা নিয়েও তথ্য থাকেবে। 

বিবিসির খবরে বলা হয়, গত কয়েক দশক ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান এই শুমারিতে নিজেদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ পাননি।    

জাতিসংঘ মিয়ানমারকে এই শুমারির কাজে সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি জনগণকে তাদের জাতিগত পরিচয় বেছে নেয়ার সুযোগ দিতে বলেছিল। কিন্তু সম্প্রতি গণতন্ত্রের পথে আসা মিয়ানমার সরকার তা আমলে নেয়নি।

মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ শুমারিতে নিজেদের জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করার সুযোগ পেলেও রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা এবং বিদ্রোহী কোচিন জনগোষ্ঠী সে সুযোগ পায়নি।

রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার। সরকারও এই নিপীড়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গায় অন্তত ২০০ মানুষ প্রাণ হারায়। ওই সময় ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা গৃহত্যাগে বাধ্য হন।

এসব কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। অবৈধ পথে বিদেশে ঢুকতে গিয়ে তাদের অনেকেই মারা পড়ছেন, নয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ারমার সরকার নিজেদের অবস্থানে অটল।

জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন।

এর বাইরে আরো প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলেও মনে করা হয়।

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।