বিমান হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযানেও মারা পড়ছে ফিলিস্তিনিরা।
Published : 19 Jul 2014, 11:56 PM
১২ দিনের সেনা অভিযানে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে গাজার হাসপাতাল কর্মকর্তারা।
স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিনে গাজার পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি বসতিতে ট্যাঙ্ক ও বুলডোজার নিয়ে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল সেনারা।
টানা ১০ দিন ধরে বিমান হামলা চালানোর পর বৃহস্পতিবার রাতে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। সেখানে হামাসের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করাই এই অভিযানের লক্ষ্য বলে দাবি তাদের।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়া ১২ দিন ধরে চলা সেনা অভিযানে নিহত হয়েছে অন্তত ৩৩৪ জন মানুষ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের সেনারা সীমান্তের নিরপেক্ষ অঞ্চলকেই (বাফার জোন, দুই দশমিক ৫ কিলোমিটার) বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তারা হামাসের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।
শনিবার একটি সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর দাবি করেছে হামাস।
ইসরায়েলি সেনারা ওই হামলার কথা স্বীকার করে বলেছে, সৈন্যরা হামলাকারী এক হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং বাকিদের ফিরিয়ে যেতে বাধ্য করেছে বলে দাবি করে। এই ঘটনায় কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাও আহত হয়।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল পিটার বলেন, ১৩টি সুড়ঙ্গ ও ৯৫টি রকেট উৎক্ষেপণকেন্দ্র ধ্বংস করেছে সেনারা। এর মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের গভীরতা ছিল ৯০ ফুট।
ফিলিস্তিনিরাও শনিবার ইসরায়েলে ১৮টি রকেট নিক্ষেপ করেছে। এতে এক ইসরায়েলি নিহত এবং দুই শিশুসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আহত হয়।
১২ দিনের লড়াইয়ে ইসরায়েলের এক সেনা ও দুই নাগরিক নিহত হয়েছেন।
গত জুনে তিন ইসরায়েলি কিশোর অপহৃত ও পরে হত্যার শিকার হওয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ইসরায়েল এর জন্য হামাসকে দায়ী করলেও তা অস্বীকার করেছে সংগঠনটি।
প্রতিশোধ নিতে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে পুড়িয়ে মেরেছে ইসরায়েলি উগ্রপন্থিরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয় ইহুদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার স্বীকার করেছে বলে জানায় ইসরায়েলি পুলিশ।
হতাহত
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় ৩৩ জন মানুষ নিহত হন যাদের অধিকাংশই বাইত আল হানোন, বাইত আল লাহিয়া এবং খান ইউনিস বসতির নিরীহ মানুষ।
শনিবার ৩৭টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করার কথা জানালেও বাইত লাহিয়া ও খান ইউনিস বসতিতে হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
যুদ্ধ শুরুর পর হামাস ইসরায়েলে ১৫শ’ রকেট হামলা চালিয়েছে বলে সেনাবাহিনীর দাবি।
যুদ্ধ বিরতির লক্ষণ নেই
হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ থামাতে এর আগে দুই দফায় উদ্যোগ নিয়েছিল মিশর। এর আগে ২০১২ সালেও দুই বৈরী পক্ষের মধ্যে আট দিনব্যাপী যুদ্ধ হয়। মিশরের সেই সময়কার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মধ্যস্ততায় দুই পক্ষ তখন যুদ্ধবিরতিতে এসেছিল।
চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুন ইসরায়েল ও গাজা এলাকায় পরিদর্শনের আসার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
যুদ্ধবিরতির উপায় খুঁজতে কাতার যেতে পারেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সেখানে কাতারের আমিরের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন তিনি।
কাতারেই নির্বাসনে আছেন হামাস নেতা খালেদ মেশাল। তবে সফরকালে তার সঙ্গে মাহমুদ আব্বাসের বৈঠক হবে কি না তা এখনো জানা যায়নি।
গাজায় হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেন, ইসরায়েলের দখলদারিত্ব, অবরোধ ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না হলে কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না।
জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে ইতোমধ্যেই ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়েছেন। গাজার ৯০ ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।