সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের অরেগন অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্ব উপকূলের দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত গ্রহণের সময়ে সূর্য যেখানেই গেছে চাঁদের একটি বিশাল ছায়া তাকে ঘিরে রেখেছিল।
এ সময়ে লাখ লাখ মার্কিনি সুরক্ষা চশমা পড়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
১৯৭৯ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের কোনো এলাকা থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায়নি, আর পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা গেল সেই ১৯১৮ সালের পর থেকে প্রায় একশ বছর পর।
কেবল পূর্ণগ্রাসই নয়, তারা এর আগে ও পরে সূর্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার অনেক কিছুও চাক্ষুস করেন। যার মধ্যে ছিল- চাঁদের ভেতর হারিয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে বিচ্ছুরিত সূর্যের আলো ‘বেইলিস বিডস’এবং পূর্ণগ্রাস শুরু ও শেষের সংকেত দেওয়া আলো ‘ডায়মন্ড রিং’।
পূর্ণগ্রাসের ছায়া অরেগন থেকে শুরু হয়ে আইডাহো, মন্টানা, উইওমিং, নেব্রাস্কা, কানসাস, আইওয়া, মিজৌরি, ইলিনয়, কেন্টাকি, টেনেসি, জর্জিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলাইনা প্রদক্ষিণ করে। এভাবে দেশটির একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে যেতে গ্রহণকবলিত সূর্যের কমবেশি দেড়ঘণ্টা সময় লাগে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এসময় পথে থাকা বিভিন্ন ছোট শহর এবং ন্যাশনাল পার্কগুলো দর্শকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায় ইলিনয়ের কার্বনডেল শহরে; প্রত্যাশা অনুযায়ী তাই এ শহরে পর্যবেক্ষণকারীদের ঢল দেখা যায়, এজন্য আগে থেকেই অতিরিক্ত ৬০ হাজার গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা রাখে শহর কর্তৃপক্ষ।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দেখা যাওয়া পরবর্তী পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণও এই শহর থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যাওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও তাদের ছেলে ব্যারন হোয়াইট হাউসের বারান্দা থেকে সুরক্ষা চশমা ব্যবহার করে সূর্যগ্রহণ উপভোগ করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
সর্বশেষ আটলান্টিক উপকূলের শহর চার্লসটন সূর্যগ্রহণকে বিদায় জানায়; এখানে গ্রহণের দেখা মেলে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৮ মিনিটে।
যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণগ্রাস দেথা গেলেও উত্তর মেরুর কানাডা অংশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া পর্যন্ত দেখা মেলে আংশিক সূর্যগ্রহণের।
পশ্চিম ইউরোপের কিছু অংশেও দিনের শেষে আকাশে তারা ওঠার ঠিক আগে আগে সূর্যকে চাঁদের ‘গ্রাসে’ পড়তে দেখা যায়।
যে সব স্থান থেকে গ্রহণ দেখা যায়নি কিংবা খারাপ আবহাওয়ার কারণে যারা দেখতে পাননি তাদের জন্য ছিল ইন্টারনেট।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা হিলিয়ামভর্তি বেলুনে থাকা অসংখ্য ক্যামেরা দিয়ে সুবিধাজনক বিভিন্ন অবস্থান থেকে সূর্যগ্রহণের ছবি তুলে ধরেছে।
চমৎকার কিছু ছবির উৎস ছিল পৃথিবীর মহাকাশ স্টেশনটিও, যার একটিতে ইতালির নভোচারী পাওলো নেসপলিকে দেখা যায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে চলমান ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।
পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে আবহাওয়া নিয়ে কাজ করা জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটগুলোও সূর্যগ্রহণের দুর্দান্ত কিছু ছবি পাঠিয়েছে।
২০১৯ সালের ২ জুলাই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, চিলি ও আর্জেন্টিনায় পরবর্তী পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে বলে জানা গেছে।