বিদ্রোহীদের শহরের দখল ছেড়ে আলোচনায় বসার আহ্বান দুতার্তের

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুগত বিদ্রোহীদের সহিংসতা ছেড়ে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে।

>>রয়টার্স
Published : 27 May 2017, 12:08 PM
Updated : 27 May 2017, 12:08 PM

ওই বিদ্রোহীরা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহর দখল করে নেওয়ার পর শুক্রবার এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

মঙ্গলবার মিন্দানাও দ্বীপের মারাউয়ি শহরে আইএস অনুগত জঙ্গিগোষ্ঠী মউতের একটি গোপন আস্তানায় ফিলিপিন্সের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিরা ব্যাপক পাল্টা হামলা চালায়। শহরজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

জঙ্গিরা শহরটির প্রধান সড়ক ও শহর অভিমুখি দুটি সেতুর নিয়ন্ত্রণ নেয়। একটি ক্যাথলিক গির্জা, কারাগার ও দুটি স্কুলে আগুন দেয়। স্থানীয় খ্রিস্টান বাসিন্দাদের জিম্মি করে। তাদের উন্মত্তায় মারাউয়ির দুই লাখ বাসিন্দার অধিকাংই পালিয়ে যায়।

এর জবাবে মিন্দানাওজুড়ে সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে।

ফিলিপিন্সের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দুপক্ষের লড়াইয়ে ১১ সৈন্য ও ৩১ জঙ্গি নিহত হয়েছে। অবশিষ্ট ২০ থেকে ৩০ জন জঙ্গিকে হটাতে ফিলিপিন্সের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডোরা অভিযানে নামে। কিন্তু শুক্রবার তারা ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়ে।

মারাউয়ির রাস্তায় দুপক্ষের লড়াইয়ে বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি মিন্দানাওয়ে আইএস অবস্থানের প্রমাণ এবং দ্বীপটিতে তারা একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন দুতার্তে, তবে এখনও শান্তির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন।

নিকটবর্তী ইলিগান শহরে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে দুতার্তে বলেন, “আপনারা বলতে পারেন এখানে আইএসআইএস আছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, এখনও আমরা আলোচনার মাধ্যমে এসব সমাধান করতে পারি। এতে আপনারা যুদ্ধ থামানোর জন্য রাজি না হলে তাই হোক, আমরা শুধু যুদ্ধই করে যাই।”

মঙ্গলবারের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে মালয়েশীয়, ইন্দোনেশীয় ও অন্যান্য দেশের গেরিলারা আছে। ফিলিপিন্স কীভাবে সাগরের অন্যপাড়ের জঙ্গিদের আভয়াশ্রম হয়ে উঠছে এটি তা দেখিয়েছে বলে মন্তব্য দেশটির সরকারের।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রোহান গুনারত্না বলেছেন, জঙ্গিদের হাতে মারাউয়ির পতন ফিলিপিন্সের জন্য একটি ‘ওয়েক-আপ কল’।  তিনি বলেন, “ফিলিপিন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর আইএসের দখলে চলে যাওয়া এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য আঘাত।

“ফিলিপিনোদের তাদের সব উদ্যোগ একত্র করে প্রচেষ্টা চালানো দরকার। তাদের দেশে আইএসের আদর্শ শিকড় গেড়েছে এটি তাদের বুঝা দরকার। তাদের স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।”

ফিলিপিন্সের সলিসিটর জেনারেল হোসে কালিদা এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক আইন জারির কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “মিন্দানাওয়ে যা হচ্ছে তা এখন আর ফিলিপিনো নাগরিকদের বিদ্রোহ নয়। এটি সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়ে বিদেশি সন্ত্রাসীদের আক্রমণে পর্যবসিত হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তারা আইএসআইএসকে ফিলিপিন্সে চলে আসার ডাক দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।”

ফিলিপিন্সের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মিন্দানাওয়ের পৃথক দুটি এলাকার আলাদা দুটি জঙ্গিগোষ্ঠী আবু সায়েফের মৌলবাদি অংশের নেতা ইসনিলোন হ্যাপিলোনের নেতৃত্বে পরস্পরে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

মারাউয়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর মঙ্গলবারের ব্যর্থ অভিযানে এই হ্যাপিলোনকেই ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল।