তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার ‘মিত্রতায়’ চাপে কাবুল, যুক্তরাষ্ট্র

তালেবানদের সঙ্গে রাশিয়ার মিত্রতা গভীর হয়ে উঠলে ইতোমধ্যেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে উদ্বিগ্নবোধ করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা।

>>রয়টার্স
Published : 8 Dec 2016, 09:53 AM
Updated : 8 Dec 2016, 09:54 AM

অপরদিকে আফগান সরকারকে উৎখাতের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া তালেবান জঙ্গিদের কোনোরকম সহায়তা দেওয়া কথা অস্বীকার করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, তালেবানদের আলোচনার টেবিলে আনতেই ‘সীমিত পরিসরে’ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

তবে কাবুলের নেতারা জানিয়েছেন, আফগান তালেবানদের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন ‘অধিকাংশই রাজনৈতিক’ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মস্কো ও তাজিকিস্তানে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক বৈঠকে হয়েছে বলে জানতে পেরেছে আফগান গোয়েন্দারা, আর তাতে, মস্কো তালেবানদের অস্ত্র ও তহবিল সরবরাহ করে সরাসরি সমর্থন দেওয়া শুরু করে কিনা, আশঙ্কায় উদ্বিগ্নবোধ করছেন আফগান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।  

এক জ্যেষ্ঠ আফগান নিরাপত্তা কর্মকর্তা তালেবানদের প্রতি রাশিয়ার সমর্থনকে ‘বিপজ্জনক নতুন প্রবণতা’ বলে অভিহিত করেছেন। আফগানিস্তানে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল জন নিকোলসনও একই ধরনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আফগানিস্তানের ওপর ‘মারাত্মক প্রভাব’ আছে এমন দুটি দেশ, পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাশিয়া এবং তালেবানদের ‘বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে’ মস্কো। 

বুধবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা নিকোলসনের মন্তব্যকে ‘অসত্য’ ও ‘শিশুসুলভ’ অভিহিত করে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলে আসছি, তালেবানের সঙ্গে কোনো গোপন আলোচনা চালাচ্ছে না রাশিয়া এবং তাদের কোনো ধরনের সমর্থনও দিচ্ছে না।” 

জাখারোভা জানান, আলোচনার মাধ্যমে আফগানিস্তানে শান্তি আনার পক্ষে রাশিয়া, আর তালেবানসহ সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই শুধুমাত্র এটি সম্ভব হতে পারে।

আফগান পার্লামেন্ট, তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক তদন্ত করে দেখার পরিকল্পনা করেছে প্রকাশিত এমন খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে রুশ দূতাবাস।

তালেবান নেতারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অন্তত ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে মস্কোর উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ হয়েছে। তবে রাশিয়ার ভূমিকা ‘নীতিগত ও রাজনৈতিক সমর্থনের’ বাইরে যায়নি বলে দাবি করেছেন তারা।

তালেবানের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “একটি পক্ষ আমাদের দুপক্ষেরই শত্রু। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানে তাদের মিত্রদের হটাতে আমাদের সমর্থন দরকার, আর রাশিয়া চায় যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা চলে যাক।”

আফগানিস্তানের যুদ্ধ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোর সমালোচনা করে আসছে রাশিয়া। কিন্তু প্রথমদিকে আফগান সামরিক বাহিনীকে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে সহায়তা করেছিল রাশিয়া এবং যৌথ বাহিনীর জন্য রাশিয়ার মধ্য দিয়ে রসদ সরবরাহের বিষয়েও রাজি হয়েছিল।

কিন্তু ইউক্রেইন ও সিরিয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ধস নামার পর থেকে আফগানিস্তানে সহযোগিতার অবস্থান থেকে সরে যায় রাশিয়া।

জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, তা যদি হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার জটিল সম্পর্কের মোড় পরিবর্তিত হতে পারে।