মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো

পুঁজিবাদী বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের পাশে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ‘দেশটির পাতা মৃত্যুফাঁদ’সহ বহু প্রতিবন্ধকতা জয় করে অর্ধশতক কাল নেতৃত্ব দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2016, 04:19 PM
Updated : 26 Nov 2016, 05:20 PM

ব্ষৈম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক বহু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে, যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব থেকে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের লড়াইয়ে সহায়তার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ৯০ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

স্বপ্নবাজ এই বিপ্লবী নেতা অজ্ঞাত এক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ২০০৮ সালে ক্ষমতা ছোট ভাই রাউলকে ছেড়ে দিয়েছিলেন।

পাঁচ দশক ধরে কিউবার নেতৃত্ব দেওয়ার এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাকে অন্তত ৬৩৪ বার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, যেগুলোর সবগুলোই ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন।

ফিদেল বলেছেন, “হত্যার চেষ্টা এড়িয়ে যাওয়ার যদি কোনো অলিম্পিক ইভেন্ট থাকত, তাহলে নির্ঘাত তাতে আমি স্বর্ণপদক জিততাম।”

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ও কিউবা থেকে বিতাড়িতদের বিভিন্ন সংগঠন তাকে হত্যার পরিকল্পনাগুলো করেছিল বলেও বহুবার বলেছেন তিনি।

তাকে বিষাক্ত বড়ি, বিষাক্ত সিগারেট ও রাসায়নিকভাবে সংক্রমিত ডাইভিং স্যুট দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়; তার উপর বিষাক্ত পাউডারও প্রয়োগ করা হয়েছিল, যার প্রভাবে তার দাড়ি পড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করা হয়।

তাকে উৎখাতের নানা পরিকল্পনার সঙ্গে কিউবার উপর যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ দশকের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পরও তিনি বহাল তবিয়তেই ছিলেন। অন্যদিকে এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পালাবদল দেখেছেন তিনি।

কাস্ত্রোর ঘটনাবহুল জীবন

# বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্র পরিচালনা করা নেতাদের তালিকায় ফিদেল কাস্ত্রো তিন নম্বরে, তার আগে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং থাইল্যান্ডের প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ। ১৯৫৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কিউবার প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করেন কাস্ত্রো। ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হলে ভাই রাউলের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ফিদেল। এরপর ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আর না ফেরার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

# জীবনের শেষ বছরগুলোতে কাস্ত্রো জনসম্মুখে খুব একটা আসতেন না। হঠাৎ দুই-একটা অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত। ২০১২ সালে দুই বার ও ২০১৩ সালে দুইবার তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়।

আর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি একটি সাংস্কৃতিক সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সর্বশেষ তাকে জনসম্মুখে আসতে দেখা যায়।

এছাড়া মূলত অতিথিদের সঙ্গের সাক্ষাতের ভিডিও এবং ছবি দিয়েই জনগণের সঙ্গে এই নেতার যোগাযোগ রক্ষা হতো। এ সময় তিনি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কয়েকশ কলাম লিখেছেন।

# জাতিসংঘে সবচেয়ে দীর্ঘ ভাষণ দেওয়ার রেকর্ডটি কাস্ত্রোর দখলে। ১৯৬০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৪ ঘণ্টা ২৯ মিনিট ধরে ভাষণ দেন তিনি। কাস্ত্রোর সবচেয়ে দীর্ঘ ভাষণের রেকর্ড ৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ১৯৯৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আরও পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ওই ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি।

# কিউবার সিগারেটকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলা কাস্ত্রো ১৯৮৫ সালে ধূমপান ছেড়ে দেন। তার কয়েক বছর পর ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে কাস্ত্রো বলেছিলেন, “সিগারেটের বাক্স দিয়ে আপনি সবচেয়ে ভালো কাজ যেটা করতে পারেন সেটা হলো, বাক্সটি আপনার শত্রুকে দিয়ে দিন।”

# ২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিনের করা সর্বকালের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম ছিল ফিদেল কাস্ত্রোর।

# পাঁচ জন নারীর গর্ভে কাস্ত্রোর সন্তান সংখ্যা নয় জন। তার বড় ছেলে ফিদেল কাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্ত, ‍যিনি দেখতে অনেকটাই পিতার মতো। ১৯৪৯ সালে ফিদেলের সাবেক স্ত্রী মির্তা ডিয়াজ-বালার্তের গর্ভে তার জন্ম হয় এবং তিনি একজন পরমাণু বিজ্ঞানী।

১৯৫০ সালে আত্মগোপনে থাকার সময় কাস্ত্রোর সঙ্গে হাভানার একজন সমাজকর্মীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে, যার ফসল তাদের কন্যা এলিনা ফার্নান্দেজ। যিনি পর্যটকের ছদ্মবেশে ১৯৯৩ সালে কিউবা ছাড়েন এবং বর্তমানে মিয়ামিতে বসবাস করছেন।

১৯৬০ সাল থেকে আইনত কাস্ত্রোর স্ত্রী দালিয়া সোতো দেল ভাল্লের ঘরে তার পাঁচ ছেলে রয়েছে।

এছাড়া ক্ষমতা নেওয়ার আগে আরও দুই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পর এক পুত্র ও এ কন্যার জনক হন কাস্ত্রো।