দুই যুগ আগে বসনিয়ায় সার্বিয়ার আগ্রাসনের সময়কার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দি হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বসনিয়ান এই সার্ব নেতার এই দণ্ড ঘোষণা করে।
৭০ বছয় বয়সী কারদিচের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কারাদিচের এই মামলাটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
কারাদিচ অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন।
তার দাবি, ওই সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপরই বর্তায়। কেননা তার কমান্ড তখন কার্যকর ছিল না।
তবে কারাদিচের মদদ ছাড়া এই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হত না বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান বিচারক ও-গোন কোন।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কমিউনিস্ট যুগোস্লাভিয়া ভেঙে গিয়ে আলাদা কয়েকটি রাষ্ট্র হওয়ার পার বসনিয়ায় আগ্রাসন চালায় সার্বিয়া। তাতে সমর্থন জানান মুসলিম প্রধান বসনিয়ার সার্ব রাজনৈতিক নেতা কারাদিচ।
তখন রাজধানী সারায়েভোসহ অন্যান্য শহর ও গ্রাম দখল করতে গিয়ে কারাদিচ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন বলে রায়ে বলা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারককে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, “বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো দখলে রাখার সময়ে বসনিয়ান সার্ব বাহিনীর হাতে যেসব মুসলিম ও ক্রোট নিহত হয়, তা কারাদিচের সমর্থন ছাড়া ঘটতে পারত না।”
প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যুতে এই শহরে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ চালানোয় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন কারাদিচ।
বিচারক ও-গোন কোন বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যেন চুক্তিবদ্ধ ছিলেন কারাদিচ।”
১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে সংঘটিত বসনিয়া যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হন।
১৯৯৫ সালেবসনিয়ার সেব্রেনিকা শহরের সংঘটিত গণহত্যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যা বলা হয়, যাতে ৮০০০ মুসলিম মারা যান।
কারাদিচের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রধান কয়েকটি অভিযোগের একটি হচ্ছে সেব্রেনিকায় যুদ্ধের সময় জাতিসংঘ ঘোষিত ‘নিরাপদ এলাকা’য় ঢুকে সার্বিয়ান বাহিনীর হত্যাকাণ্ড কারাদিচের নিয়ন্ত্রণেই হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০০৮ সালে গ্রেপ্তার হন তখনকার বসনিয়ান-সার্ব রিপাবলিকের এই প্রধান এবং বসনিয়ান-সার্ব বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার।
তবে রায়ের আগে এক সাক্ষাৎকারে কারাদিচ দাবি করেন, ওই সময় শান্তি বজায় রাখতে কাজ করেছিলেন তিনি। এজন্য শাস্তি নয়, বরং প্রশংসাই তার প্রাপ্য।