আমাকে যেতে দিন: অ্যাসাঞ্জ

জাতিসংঘ প্যানেলের রায় পক্ষে পাওয়ার পর ভিডিও লিংকের মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, তাকে এখন ‘মুক্তভাবে’ লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাস ত্যাগ করতে দিতে হবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2016, 02:49 PM
Updated : 5 Feb 2016, 02:49 PM

শুক্রবার জাতিসংঘের ‘নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার’ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকেই অ্যাসাঞ্জ আসলে নিবর্তনমূল বন্দিদশার শিকার। 

এই বন্দিত্বের অবসান ঘটিয়ে তাকে মুক্তভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে এই প্যানেল।

অ্যাসাঞ্জের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের পর জাতিসংঘের এই প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, অ্যাসাঞ্জের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চলাফেরার স্বাধীনতাকেও সম্মান করতে হবে।

এর কয়েকঘণ্টা পর পূর্ব লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে হাজির হন অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জ, যিনি ধর্ষণের অভিযোগে সুইডেনে প্রত্যার্পণ এড়াতে ২০১২ সাল থেকে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে অব্স্থান করছেন।

তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আইনি বিতর্কের অবসান ঘটেছে, ‘যার সূচনা করেছিল’ সুইডেন ও যুক্তরাজ্য।

“আমরা আজ সত্যিই এক বড় বিজয় অর্জন করেছি, যা আমার মুখে হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। ... এখন জাতিসংঘের এই রায় বাস্তবায়নের বিষয়টি সুইডেন ও যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব।”

সুইডেনের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের পুলিশ ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে। নয় দিন পর কঠিন কয়েকটি শর্তে জামিন পান তিনি। পাসপোর্ট জমা রেখে দিনরাত গোড়ালিতে ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরা অবস্থায় এক বন্ধুর বাড়িতে থাকার এবং প্রতিদিন থানায় হাজিরা দেওয়ার শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এরপর অ্যাসাঞ্জ উচ্চ আদালতে গেলেও তাকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তরের পক্ষে রায় আসে। ওই অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুন লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ।

দূতাবাসে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে ফুসফুসের সমস্যা ও হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও সেখান থেকে বের হননি তিনি। অ্যাসাঞ্জের আহ্বানেই ২০১৪ সালে জাতিসংঘ প্যানেল তদন্ত শুরু করে।

প্যানেলের সুপারিশ বা অ্যাসাঞ্জের দাবি অনুযায়ী তার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়া বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ যে নেওয়া হচ্ছে না তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

লন্ডনের পুলিশও বলেছে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে জারি করা ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে। বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেপ্তারের সব চেষ্টাই তারা করবে।

জাতিসংঘের ওই ওয়ার্কিং গ্রুপের বক্তব্য মেনে নেওয়ার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা যে যুক্তরাজ্যের নেই, তা মনে করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ চাইলে যে কোনো সময় দূতাবাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। তবে তাকে সুইডেনে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।  

সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে নেওয়া হলেও ধর্ষণের আরেকটি মামলা তদন্তাধীন। তার বিরুদ্ধে জারি করা ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও বহাল রয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাসাঞ্জ বলে আসছেন, এটি একটি ‘ষড়যন্ত্র’, যাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা যায়।

উইকিলিকস ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যক কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে দিলে স্পর্শকাতর বিভিন্ন ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও অবস্থান গণমাধ্যমে চলে আসে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেকায়দায় পড়ে যায় বিশ্বের ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধর’ দেশটি।

ওই সময় থেকেই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসা অ্যাসাঞ্জকে বিচারের জন্য চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখনও উইকিলিকসের ‘অপরাধের’ তদন্ত চলছে।

তবে জাতিসংঘ প্যানেলের মতো একুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্ডো পাটিনোও বলেছেন, অ্যাসাঞ্জকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে।