আইএস দুর্বল হয়েছে, অভিযান জোরদার: সিরিয়া

রাশিয়ার বিমান হামলায় আইএসসহ অন্যান্য ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ লড়াইয়ের সক্ষমতা কমে গেছে বলে সিরিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2015, 07:54 PM
Updated : 8 Oct 2015, 07:54 PM

এ পরিস্থিতিতে সিরীয় সেনাবাহিনী অভিযান জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সিরিয়ান আর্মির চিফ অফ স্ট্যাফ জেনারেল আলী আব্দুল্লাহ আয়ূব বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে একথা বলেন বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন জানিয়েছে, “সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল এবং সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়া বিভিন্ন শহর ও এলাকাকে মুক্ত করাই এ অভিযানের লক্ষ্য।”

‘বিস্তৃত পরিসরে’ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে রাশিয়া মূল ভূমিকা পালন করছে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, “রুশ সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় আইএস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লড়াই করার সক্ষমতা কমে যাওয়ার পর সিরিয়ান সশস্ত্র বাহিনী তাদের সামরিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।”

সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানান, বুধবার রাতে রুশ নৌবাহিনীর চারটি যুদ্ধজাহাজ থেকে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করে ২৬টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

সবগুলো ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে এবং তাতে কোনো বেসামরিক নাগরিক হতাহত হননি বলে জানান তিনি। এ সময় পুতিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়।

সিরিয়ায় রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১১২টি লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান শোইগু।

এদিকে সিরিয়ায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য নিক্ষিপ্ত রাশিয়ার চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে পড়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে কাস্পিয়ান সাগরে নৌবহর থেকে  সিরিয়ায় আইএসসহ সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে রাশিয়া। ইরান ও ইরাক পেরিয়ে সেগুলোকে সিরিয়ায় পৌঁছাতে হয়।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা তাদের বলেছেন ইরানের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় চারটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত হয়েছে।

এতে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে এক কর্মকর্তা বললেও এখনও সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি বলে আরেকজন বলেছেন।

এদিকে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ’র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের নিক্ষিপ্ত সব ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, যেগুলো অস্ত্র কারখানা, অস্ত্রের গুদাম, কমান্ড সেন্টার ও প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া ‘কালিবার’ নামের তুলনামূলক নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধে এবারই তারা প্রথম ব্যবহার করছে।

অভিযান জোরদারের কথা বললেও কোন কোন এলাকায় তা চালানো হচ্ছে তা বলেননি জেনারেল আয়ূব।

যুদ্ধের জন্য নতুন কয়েকটি ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাশিয়ার বিমান হামলার সঙ্গে সমন্বয় করে সিরীয় বাহিনীর স্থল অভিযানে সহায়তার জন্য ইরান কয়েকশ সেনা পাঠিয়েছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।

এছাড়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার প্রতিবেশী দেশ লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহর কাছ থেকেও সহায়তা পাচ্ছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

২০১০ সালের শেষ দিকে আরব বসন্তের সূচনায় বিভিন্ন দেশে গণজাগরণের এক পর্যায়ে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে বিভিন্ন পক্ষ।

এক পর্যায়ে উত্থান ঘটে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের; সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় তারা।

উগ্রপন্থি এই গোষ্ঠীর মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের খবর আসার এক পর্যায়ে তাদের দমনে বিমান হামলা চালানো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।

তবে বছরখানেকের ওই অভিযানের পরেও আইএসের তৎপরতার মধ্যে গেল সপ্তাহে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালানো শুরু করে রাশিয়া।