৯/১১'র সেই ‘ডাস্ট লেডি' আর নেই

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে  ৯/১১ হামলার পর ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আপাদমস্তক ধূলোয় ঢাকা মার্সি বর্ডারস নামক এক নারীর ছবি সারা বিশ্বে ওই হামলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ‘ডাস্ট লেডি’ নামে পরিচিতি পাওয়া সেই নারী পাকস্থলির ক্যান্সারে মারা গেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2015, 01:44 PM
Updated : 26 August 2015, 01:44 PM

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলার সময় বর্ডারসের বয়স ছিল ২৮ বছর।

সোমবার ৪২ বছর বয়সে মারা যান দুই সন্তানের এ জননী। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানানো হয়।

বর্ডারস মনে করতেন, হামলার সময় শরীরের ভেতর ঢুকে পড়া ধূলোর কারণেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ওই সময়ের পর তিনি বিষন্নতায় ভুগতে শুরু করেন এবং এক সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

তার ভাই মাইকেল বর্ডারস ফেইসবুকে লেখেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার বোন মারা গেছে।”

টুইন টাওয়ারে হামলার মাত্র এক মাস আগে ব্যাংক অব আমেরিকাতে যোগ দেন বর্ডারস। বিমান যখন টুইন টাওয়ারে আঘাত করে তখন উত্তরের টাওয়ারের ৮২ তলায় কাজ করছিলেন তিনি।

ওই ঘটনার পর ডেইলি মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্ডারস বলেছিলেন, “প্রচণ্ড ঝাঁকুনির পর ভবনটি পড়ে যেতে শুরু করে। আমি নিজের উপর সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একদম জমে গিয়েছিলাম। কিভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম সেটা আমার মনে নেই।”

ঘটনার সময় বসের নড়াচড়া না করার আদেশ অমান্য করে বর্ডারস প্রথমে সিঁড়ির নিচে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে কাছের একটি ভবনের লবিতে ঢুকে পড়েন বলে জানা গেছে।

সেখানেই তার ধূলা মাখা ছবিটি তোলেন আলোকচিত্রী স্টান হোন্ডা।হামলার দশম বারষিকীতে নিজের ফেইসবুক পোস্টে হোন্ডা লেখেন, “ধূসর ধূলোয় আপাদমস্তক ঢাকা এক নারী আসলেন। আপনি বলতেই পারেন, কাজে আসার জন্য তিনি সুন্দর পোশাক পরিধান করেছিলেন।পুলিশ আসার আগে তিনি লবিতে এক সেকেন্ড দাঁড়িয়েছিলেন। আমি তার একটি ছবি তুলি।”

নিউ জার্সির বাসিন্দা বর্ডারস জানতেন না তার ছবি তোলা হয়েছে। পরে তার মা ছবিটি দেখেন এবং হোন্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বর্ডারসের ছবি ভয়ঙ্কর ওই দিনের প্রতীকে পরিণত হলেও ধীরে ধীরে বিষন্নতায় ডুবে যেতে থাকেন তিনি। অতিরিক্ত মাদকাসক্তির কারণে নিজের দুই সন্তানের হেফাজতও হারান তিনি।

হামলার দশ বছর পর ২০১১ সালে নিউ ইয়রক পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্ডারস বলেন, “গত ১০ বছর ধরে আমি একদিনের জন্যও কোনো কাজ করিনি। এখন আমি পুরোপুরি বিধ্বস্ত একজন মানুষ। আমি সবসময় একটি বিমান দেখতে পাই এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি।”

ওই বছর এপ্রিলে তাকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হয়ে সন্তানদের হেফাজত ফিরে পান।

২০১৪ সালের নভেম্বরে বর্ডারসের পাকস্থলিতে ক্যান্সার সনাক্ত হয়।নিজের অসুস্থতার জন্য হামলার ঘটনাকে দায়ী করে নিউ জার্সি জারনালে বর্ডারস বলেছিলেন, “আমি নিশ্চিত ওই কারণেই আমার ক্যান্সার হয়েছে। আমার কোনো অসুস্থতা ছিল না। আমার উচ্চ রক্তচাপ নেই, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের সমস্যাও নেই।”

হামলার পর বেঁচে যাওয়া কয়েক হাজার মানুষ পরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যদিও হামলার সঙ্গে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কোনো যোগসূত্র চিকিৎসাবিজ্ঞান খুঁজে পায়নি।

বর্ডারসের কন্যা নোয়েল বুধবার নিউ ইয়র্ক পোস্টকে বলেন, “আমার মা একজন অসাধারণ যোদ্ধা ছিলেন। শুধু তাই নয়, যে তিনি ‘ডাস্ট লেডি’। বরং তিনি আমার হিরো। তিনি সবসময় আমার মধ্যে বেঁচে থাকবেন।”