অ্যাপল ওয়াচের অজানা ১৩ তথ্য

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাজারে এসেছে মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের প্রথম পরিধেয় প্রযুক্তি পণ্য ‘অ্যাপল ওয়াচ’। সাম্প্রতিক ‍এক প্রতিবেদনে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল বহু প্রতিক্ষীত অ্যাপল ওয়াচ সম্পর্কে ১৩টি তথ্য প্রকাশ করেছে যা হয়তো অনেকেরই অজানা।

আজরাফ আল মূতীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2015, 03:14 PM
Updated : 17 April 2015, 03:14 PM

ম্যাশএবলের ওই প্রতিবেদনের বদৌলতে চলুন জেনে নেয়া যাক অ্যাপল ওয়াচের সে ১৩টি তথ্য –

১. অ্যাপল ওয়াচের ডিজাইন, কার‌্যক্ষমতা এবং মূল্য ইত্যাদি বিষয় জানার পর অনেক অ্যাপল ভক্তেরই ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে এ পরিধেয় পণ্যটি তৈরির ব্যাপারে হয়তো প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবসের কোনো পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আদতে এ ধারণাটি ভুল। ২০১১ সালে জবস মারা যাবার পর প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিজাইন চিফ জনি আইভ ‘অ্যাপল ওয়াচ’ তৈরির ব্যাপারে চিন্তা করেন। খোদ অ্যাপল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলেই জানিয়েছে ম্যাশএবল।

২. উচ্চ-মূল্যের হাতঘড়িতে যে চাবি বা ক্রাউন থাকে তার আদলে অ্যাপল ওয়াচের ‘ডিজিটাল ক্রাউন’ ডিজাইন করা হয়েছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, অ্যাপল ওয়াচের পেছনেও পণ্য সম্পর্কিত নানা খুঁটিনাটি খোঁদাই করে লিখে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত বিখ্যাত ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মান জানাতেই এ কাজটি করেছে অ্যাপল।

৩.  স্বল্পদামী অ্যাপল ওয়াচ ডিসপ্লেতে গ্লাস হিসেবে আইফোনের মতোই শক্ত ও সহজে স্ক্র্যাচ পড়বে না এমন গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে অ্যাপল এখনও কিছু জানায়নি, তবুও অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা স্মার্টওয়াচটির ডিসপ্লেতে আইফোন ৬-এর গরিলা গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে।

৪. অ্যাপল ওয়াচের ডিজাইন সম্পর্কিত দর্শন নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছে স্মার্টওয়াচটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। আর তাই অ্যাপলের ওয়াচ সম্পর্কে আগ্রহীদের ওই বইটি সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে ম্যাশএবল।

৫. অ্যাপল, তাদের নির্মিত স্মার্ট ওয়াচের জন্য একটি ‘কাস্টম ফন্ট’ ডিজাইন করেছে যা স্যান ফ্রান্সিসকো নামে পরিচিত। তবে এই ‘কাস্টম ফন্ট’ ডিজাইনের পেছনেও একটি কারণ রয়েছে। ম্যাশএবলের তথ্য অনুসারে, ডিভাইসটির ছোট কিন্তু হাই-রেজুলেশন ডিসপ্লেতে সর্বোচ্চ পাঠযোগ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই নতুন এই ফন্ট ডিজাইন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

৬. পরিধেয় পণ্যটি যাতে নিখুঁত সেবা দিতে পারে সেজন্য কোনো প্রকার কার্পণ্য করেনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। আর তাই মানুষ সময়ের ব্যাপারে ঠিক কীভাবে চিন্তা করে তা বোঝার জন্য বিভিন্ন ঘড়ি-নির্মাতা বিশেষজ্ঞ ও দার্শনিকদের সঙ্গে কথাও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

৭. ম্যাশএবলের তথ্য মোতাবেক, সোলারফেইস হচ্ছে অ্যাপল ওয়াচের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় ওয়াচফেইস। এই ওয়াচফেইসে একটি বাঁকানো রেখা দেখা যায়। এ রেখাটির উচ্চতা ও দৈর্ঘ্যের সাহায্যে ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন তারা বিশ্বের কোন অংশে বসবাস করছেন। সহজ করে বলা যায়, রেখাটির সাহায্যে ব্যবহারকারী প্রতিদিন কত ঘন্টা সূর্যের আলো পাচ্ছেন তা দর্শন করতে পারেন।

৮. অ্যাপল ওয়াচের প্রতিটি ওয়াচফেইসেই বিভিন্ন ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের একটি ওয়াচফেইস ফিচারে দেখা যায়, ব্যবহারকারী সময় দেখার জন্য যতবার কব্জি উঠাচ্ছেন ততবার ডিসপ্লেতে ফুল ফুঁটছে। ফিচারটিকে খুব সাধারণ মনে হলেও আসলে এটি ততোটা সাধারণ নয়। ফিচারটির জন্য প্রথমে অ্যাপল খুব উচ্চ মানের ক্যামেরার সাহায্যে ফুল ফোঁটার স্টপ-মোশন ছবি তুলেছে এবং পরবর্তীতে এফেক্টটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যাতে প্রতিটি ফুল নির্দিষ্ট একটি গতিতে ফোঁটে।

৯. অ্যাপল ওয়াচের ডিফল্ট গ্লেন্স সেটিংস বেশ ভালোভাবে কাজ করলেও এর মাধ্যমে পণ্যটির সব সেটিং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা চাইলে অ্যাপল ওয়াচের যেকোনো গ্লেন্স মুছে দিতে পারবেন বা রিঅর্ডারের জন্য তা ড্র্যাগ করে ড্রপ করতে পারবেন। এ ছাড়া অ্যাপস থেকে নতুন গ্লেন্স যোগ করারও সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ম্যাশএবল।

১০. ব্যবহারকারীরা অ্যাপল ওয়াচের ডিজিটাল ক্রাউন চেপে ধরলেই স্মার্টওয়াচটির ডিসপ্লেতে বিভিন্ন অ্যাপ এসে উপস্থিত হয়। ব্যবহারকারী চাইলে ইউটিলিটি থেকে যেকোনো অ্যাপ আইকন চেপে ধরে তা পছন্দের স্থানে সড়িয়ে আনা সম্ভব। তবে ব্যবহারকারীকে এক্ষেত্রে ঠিক আইফোনের মতোই অ্যাপ আইকনটি ভাইব্রেট না করা পর‌্যন্ত চেপে রাখতে হবে। আইফোনের মতো অ্যাপ সড়িয়ে আনা সম্ভব হলেও সরাসরি ডিসপ্লে থেকেই অ্যাপ মুছে দেয়ার কোন অপশন অ্যাপল ওয়াচে নেই বলেই জানিয়েছে ম্যাশএবল।

১১. অ্যাপল ওয়াচের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্টফোনের ঝঞ্ঝাট থেকে ব্যবহারকারীকে মুক্তি ‍দেওয়া। সাধারণ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও ব্যবহারকারীরা চাইলে অ্যাপল ওয়াচের বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। এ ধরনের সুবিধার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যাপল ওয়াচ ভাইব্রেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে তার নতুন মেসেজ এসেছে এবং স্মার্টওয়াচটির ডিসপ্লেতেই ব্যবহারকারী দেখতে পাবেন কে তাকে মেসেজটি পাঠিয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবহারকারী চাইলে কিছুক্ষণ কব্জি উঁচু করে রেখেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজটি দেখতে পারবেন।

১২.  ‘অ্যাপল ওয়াচ ফেইস’ স্ক্রল করার সময় সেগুলোতে প্লাস সাইন দেখা  গেলেও বর্তমানে থার্ড-পার্টির তৈরি কোনো ‘ফেইস’ অ্যাপল ওয়াচে যোগ করার কোনো পরিকল্পনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির নেই বলেই জানিয়েছে ম্যাশএবল।

১৩. এপ্রিলের ১০ তারিখ থেকে অ্যাপল স্টোরে অ্যাপল ওয়াচ দেখতে ও কিনতে পারছেন আগ্রহীরা। কিন্তু আগে কিনলেও ২৪ তারিখের আগে স্মার্টওয়াচটি হাতে পাবেন না ক্রেতা। আর তাই আগ্রহীদের জন্য ম্যাশএবলের পরামর্শ হচ্ছে, যতখুশি দেখুন, পরখ করুন কিন্তু এখনই ঘড়িটি কিনতে যাবেন না!