শীর্ষ দশ বুদ্ধিমান মানুষ

বুদ্ধিমত্ত্বার মাপকাঠির বিচারে বিশ্বের প্রতিটি মানুষই ভিন্ন। ধারণা করা হয় বিশ্বব্যাপী মানুষের সংখ্যা এখন ৭শ’ কোটি পেরিয়ে। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থান আর প্রেক্ষাপট ভেদে এই বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে নিজেদের আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ। নিজস্ব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নানা অবদান রেখে চলেছেন তারা।

আজরাফ আল মূতীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2015, 12:50 PM
Updated : 24 March 2015, 02:35 PM

এক প্রতিবেদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দশজন জীবিত বুদ্ধিমান মানুষের তালিকা প্রকাশ করেছে অ্যানন এইচকিউ।

প্রতিবেদনটির আলোকে চলুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক তাদের সম্পর্কে-

১. টেরেন্স টাও

বর্তমানে ৩৯ বছর বয়সী টেরেন্স টাও মাত্র দু’বছর বয়সেই পাঁচ বছর বয়সীদের বানান করা ও সংখ্যা যোগ করা শেখাতেন। ১০ বছর বয়স থেকেই অংশ নেয়া শুরু করেন আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে। পর্যায়ক্রমে ১৯৮৬ সালে ব্রোঞ্জ, ১৯৮৭ সালে রৌপ্য এবং ১৯৮৮ সালে স্বর্ণ পদক জিতে গণিত অলিম্পিয়াডে সবচেয়ে কমবয়সী স্বর্ণপদক বিজয়ী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। ১৬ বছর বয়স নাগাদ স্নাতক ও সম্মান সম্পন্ন করেন এবং ২০ বছর বয়সে পিএইচ.ডি অর্জন করেন টাও। টাওয়ের আইকিউ ২৩০।

২. ক্রিস্টোফার হিরাটা

৩৩ বছর বয়সী মার্কিন কসমোলজিস্ট ও অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট ক্রিস্টোফার হিরাটার আইকিউ ২২৫। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ইন্টারন্যাশনাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ পদক জিতেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ক্যালটেক ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা শুরু করেন ১৪ বছর বয়সে ও ১৬ বছর বয়সেই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ২২ বছর বয়সে পিএইচ.ডি অর্জন করেন।

৩. কিম উং-ইয়ং

মাত্র চার মাস বয়সেই কথা বলা শুরু করেন কিম উং-ইয়ং এবং দু’বছর বয়স নাগাদ জাপানিজ, কোরিয়ান, জার্মান এবং ইংরেজি পড়তে শুরু করেন। তিন বছর বয়স থেকেই অতিথি ছাত্র হিসেবে হানইয়ং ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিদ্যার পাঠ নেয়া শুরু করেন এবং আট বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করার জন্য নাসার আমন্ত্রণ পান উং-ইয়ং। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী উং-ইয়ংয়ের বর্তমান বয়স ৫৩ বছর। ২১০ আইকিউ নিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডেও নিজের নাম লিখিয়েছেন তিনি।

৪. ক্রিস্টোফার ল্যাঙ্গান

নিজ প্রচেষ্টায় শিক্ষিত ৬৫ বছর বয়সী ল্যাঙ্গান বর্তমানে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মার্কিন হিসেবে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে তার আইকিউ ১৯৫ থেকে ২১০ এর মধ্যে। এসএটি (‘স্যাট’ নামে পরিচিত) পরীক্ষার প্রায় পুরোটাই ঘুমিয়ে পার করলেও একটি নম্বরও হাত ছাড়া হয়নি তার। মন ও বাস্তবতার মধ্যে সম্পর্কের উপর ল্যাঙ্গানের ‘কগনিটিভ-থিওরিটিক মডেল অফ দ্য ইউনিভার্স’ তত্ত্ব বেশ আলোচিত।

৫. রিক রসনার

৫৪ বছর বয়সী মার্কিন টিভি লেখক রিক রসনারকে বিশ্বের পঞ্চমতম বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রসনার বিভিন্ন সময়ে স্ট্রিপার, রোলার স্কেটিং ওয়েটার, বাউন্সার এবং নুড মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। নিজের ১৯২ আইকিউ ধরে রাখতে প্রতিদিন ৩টি ফিশ ওয়েল ক্যাপসুল, মেটফরমিন, গ্লাইসোডিন এবং বেবি অ্যাসপিরিন সহ ৫০টি পিল হজম করেন!

৬. গ্যারি ক্যাসপারভ

‘রাশিয়ান চেস উইজার্ড’ নামে পরিচিত গ্যারি ক্যাসপারভের বয়স এখন ৫১ বছর। মাত্র ২২ বছর বয়সেই ক্যাসপারভ বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ-এ বিজয়ী হন এবং সর্বকণিষ্ঠ দাবারু চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন। ক্যাসপারভ ধারাবাহিকভাবে মোট ১৫টি পেশাদার দাবা টুর্নামেন্ট এবং সর্বমোট ১১ বার ‘চেস অস্কার’-এ জয়লাভ করেছেন। কাসপারভের আইকিউ ১৯০।

৭. স্যার অ্যান্ড্রু ওয়াইলস

৩৫৮ বছরের পুরানো ‘ফারমা’র লাস্ট থিওরেম’-এর সমাধান করে গিনেজে বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন এই ইংরেজ গণিতবিদ। বর্তমানে ৬১ বছর বয়সী ১৯৯৫ সালে গণিতে নিজ অবদানের জন্য নাইটহুড খেতাব পান। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে তার পুরস্কারের সংখ্যা ১৫টি। ১৭০ আইকিউ তার।

৮. জুডিট পোলগার

বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী জুডিট পোলগার ১৯৯১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে দাবারু ববি ফিশারকে হারিয়ে সর্বকণিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে বিশ্বের এক নম্বর দাবারু গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে আবারও ইতিহাস গড়েন তিনি। পোলগারের আইকিউও ১৭০।

৯. পল অ্যালেন

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় পল অ্যলেনের অবস্থান ৫১তম। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতার মোট সম্পদের পরিমাণ এক হাজার সাতশ’ পঞ্চাশ কোটি ডলার। আইকিউ ১৭০। এছাড়াও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, বন্যপ্রাণী রক্ষা ইত্যাদি খাতে একশ’ ৮০ কোটি ডলারেরও বেশি দান করেছেন অ্যালেন।

১০. স্টিফেন হকিং

৭৩ বছর বয়সী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, কসমোলজিস্ট এবং লেখক স্টিফেন হকিংকে প্রায়ই এ যুগের আইনস্টাইন বলা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানে অবদান ছাড়াও এই ‘ট্যাগ নেইম’-এর মূল কারণ, আইনস্টাইনের মতো হকিংয়ের আইকিউও ১৬০।

দূরারোগ্য মোটর নিউরন ডিজিসে আক্রান্ত হকিং অল্প বয়সেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়লে এবং বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেও বিশেষ কম্পিউটারের সাহায্যে প্রতিনিয়ত অনুসন্ধান করছেন মহাবিশ্বের নানা রহস্য। নাইটহুড খেতাব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া এই বিজ্ঞানীর কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে রয়েছে বিভিন্ন তত্ত্ব।