নতুন বছরের আসন্ন পাঁচ স্বাস্থ্য প্রযুক্তি

২০১৪ সালকে স্বাস্থ্য প্রযুক্তির বছর বললে ভুল হবে না। ডিজিটাল হেলথ ইনকিউবেটর স্টার্টআপ হেলথের তথ্য মোতাবেক, ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি খাতে প্রায় দ্বিগুণ বিনিয়োগ হয়েছে।

আজরাফ আল মূতীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2014, 01:53 PM
Updated : 28 Dec 2014, 01:53 PM

২০১৫ সালে বাজারে অভিষেক হবে এমন পাঁচ স্বাস্থ্য প্রযুক্তির ব্যাপারে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল।

১. কানে পরিধেয় প্রযুক্তি

ম্যাশএবলের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্লিপ-অন ট্র্যাকার ও ব্রেসলেট জাতীয় পরিধেয় পণ্যের পাশাপাশি ২০১৫ সালে আসছে কানে পরিধান করা যাবে এমন কিছু নতুন প্রযুক্তি পণ্য।

এ প্রসঙ্গে সেন্সোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও ডক্টর ভাহরাম মৌরাডিয়ান জানিয়েছেন, কানে পরিধেয় প্রযুক্তি ডিভাইস পরোক্ষ কিন্তু নিখুঁতভাবে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। রক্তচাপ, শ্বাসক্রিয়া, হৃৎস্পন্দন, অক্সিজেন পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য সরবরাহ করতে পারবে ডিভাইসগুলো। সেন্সোগ্রামের তৈরি এমন একটি ডিভাইস সেন্সোট্র্যাক। ২০১৫ সালের মার্চে ডিভাইসটি বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে ম্যাশএবল। 

অন্যদিকে ২০১৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাজারে আসবে কানে পরার ডিভাইস ‘বিটবাইট’। বিটবাইট ডিভাইসটি প্রথমে ব্যবহারকারীর খাদ্যাভাস সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করবে এবং তা বিশ্লেষণ করে খাদ্যাভাসের ঠিক কোন বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সে সম্পর্কে তাৎক্ষনিক পরামর্শ দেবে। পরিধেয় ডিভাইসটি হয় সরাসরি ব্যবহারকারীর কানে পরামর্শ জানিয়ে দেবে অথবা স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।

২. সোয়েট সেন্সর স্ট্রিপস

এই বায়োসেন্সর স্ট্রিপগুলো শরীরের ঘামে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করে ব্যবহারকারীকে শরীরের অভ্যন্তরীন রাসায়নিক ক্রিয়া সম্পর্কে তাৎক্ষনিক ডেটা সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে ম্যাশএবল। নমনীয় এই স্ট্রিপ সেন্সর তৈরি করেছে ইলেকট্রোজাইম। এই সেন্সরটি ব্যবহারকারীর পরিধেয় ডিভাইসের পেছনে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। এটি থেকে ব্যবহারকারী তার শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য, শরীরের পানির রাসায়নিক যৌগের মাত্রা, পেশিনির্ভর শ্রম এবং শারীরিক কাজ ট্র্যাক করতে পারবেন। 

এ প্রসঙ্গে ইলেকট্রোজাইম এলএলসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিওও জ্যারেড ট্যাংনে বলেন, “রাসায়নিক সেন্সর শরীরের রাসায়নিক ক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্যের এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে যা এখনও কোনো পরিধেয় ডিভাইসে দেখা যায়নি।”

৩. স্মার্টফোন কেইস যখন মেডিকাল ডিভাইস

স্মার্টফোনের কেইস মেডিকেল ডিভাইসে রূপান্তর করতে কাজ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এই ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রিক প্রযুক্তি পণ্যগুলোর মধ্যে ‘অ্যালাইভকোর হার্ট মনিটর’ সবার আগে বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছে ম্যাশএবল। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনেস্ট্রেশন (এফডিএ) থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া এই ডিভাইসটি মূলত একটি বিশেষ আইফোন কেইস যার মাধ্যমে ৩০ সেকেন্ডে ইসিজি রেকর্ড করা সম্ভব।

২০১৫ সালে এধরনের আরও কয়েকটি ডিভাইস বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে ম্যাশএবল ডটকম।

৪. প্রেসক্রিপশান-অনলি অ্যাপস

গুগল প্লে বা আইটিউনসের স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাপের অভাব নেই। ২০১৫ সালে এধরনের অ্যাপের তালিকায় যোগ গতে পারে বিশেষ ‘প্রেসক্রিপশান অ্যাপ’। এই জাতীয় অ্যাপের মধ্যে ওয়েলডকের নির্মিত ব্লুস্টার অ্যাপই প্রথম বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে ম্যাশএবল। অ্যাপটিতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা গ্লুকোজ মাত্রা, ভোজনপ্রণালী, ব্যায়াম ইত্যাদি ডেটা ইনপুট করতে পারবেন। ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া জানাবে অ্যাপটি। এছাড়াও চিকিৎসককে রোগীর সব ডেটার যোগান দেবে অ্যাপটি।

বিভিন্ন গুরুতর রোগের আক্রান্তদের জন্য ২০১৫ এবং পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধরনের আরও ‘মোবাইল প্রেসক্রিপশান থেরাপি’ অ্যাপ আসবে বলে আশা করছেন ওয়েলডকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান মেডিকাল কর্মকর্তা ডক্টর সুজান সিসকো ক্লাফ।

৫. স্বাস্থ্যসম্মত আলো

আইপ্যাডের মতো ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলোকরশ্মি মানুষের অভ্যন্তরীন জৈব প্রক্রিয়ার ছন্দপতন ঘটাতে সক্ষম। এটি ব্যবহারকারীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।   

ঠিক অনুরূপভাবে দিনে স্বল্প আলোও মানবদেহে প্রভাব ফেলে থাকে। অবশ্য এ সমস্যার সমাধানে ইতোমধ্যেই গুডলাক্স টেকনোলজি এ সংক্রান্ত পরিধেয় ডিভাইস সানস্প্রাইট লঞ্চ করেছে। গুডলাক্সের ভাষ্য, উজ্জ্বল আলোর সঙ্গে কর্মক্ষমতা, মানসিক অবস্থা ও ঘুমের সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সিইও এড লিকোভিচ বলেন, “উজ্জ্বল আলোর মাধ্যমে মানবদেহের অভ্যন্তরীন ঘড়ি বা বায়োলজিকাল ক্লক নির্ধারিত হয়ে থাকে যা মানুষের হরমোন, কার্যক্ষমতার মাত্রা, মেজাজ, হজম প্রক্রিয়া এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে।”

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ড্রিফট বাল্বের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেওয়েল ডেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ক্যামেরন পোস্টলওয়েট জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব কর্মদ্যোমী হতে, অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও এ ধরনের মানুষ হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস ও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন।” আসন্ন বছরে মানবদেহে কৃত্রিম আলোর প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতনতা দেখা যাবে, এ সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তিও উদ্ভাবিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।