স্যাফায়ার স্ক্রিন ব্যর্থতা যে কারণে

আইফোন ৬-এর যে স্যাফায়ার স্ক্রিন নিয়ে বিশাল তোলপার, শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ সেই প্রকল্প। আইফোনে স্যাফায়ার স্ক্রিন অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে কয়েক বছরে একশ’ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছিল টেক জায়ান্ট অ্যাপল। এই ‘স্ক্র্যাচপ্রুফ’ স্ক্রিনের বদৌলতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠাগুলোর থেকে অনেকটাই এগিয়ে যেত প্রতিষ্ঠানটি।

মামুনুর রশীদ শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2014, 02:22 PM
Updated : 10 Dec 2014, 02:22 PM

নতুন দু্ই আইফোনে স্যাফ্যায়ার স্ক্রিন তো নেই-ই, এমনকি আইফোন ৬ এবং ৬ প্লাস উন্মোচনের এক মাসের মধ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে নিউ হ্যাম্পশায়ারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিটি অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস। স্বল্প খরচে বাণিজ্যিক প্রকল্পে স্যাফায়ার স্ক্রিন সরবরাহ করার জন্য অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। 

স্যাফায়ার স্ক্রিন নিয়ে এই বিপর্যয়ের ব্যপারে এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল ডটকম।

বিলাসবহুল ঘড়ির কাঁচ তৈরিতে স্যাফায়ার ব্যবহার হয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। অ্যাপল ডিভাইসের ক্যামেরা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্কানারেও স্যাফায়ার ব্যবহৃত হচ্ছে ২০১৩ থেকে। তবে একটি স্মার্টফোনের স্ক্রিন হিসেবে ব্যবহারযোগ্য আকারের স্যাফায়ার তৈরির খরচ প্রচলিত স্ক্রিনের চেয়ে ১০ গুন বেশি।

তবে যন্ত্রপাতির আকার বাড়িয়ে এবং সিলিন্ডার আকৃতির স্যাফায়ার ক্রিস্টাল তৈরির মাধ্যমে বড় সাইজের স্যাফায়ার তৈরির খরচ কমিয়ে আনা যাবে দুই-তৃতীয়াংশ, ২০১৩ সালে এমনটাই দাবি করে জিটি। সিলিন্ডার আকৃতির এই ক্রিস্টালগুলোর নাম দেয়া হয় বোল, যা সাধারণ স্যাফায়ার ক্রিষ্টালের তুলনায় ছিল দ্বিগুণ বড়।

নিজেদের ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় স্যাফায়ার স্ক্রিনের চাহিদা মেটাতে প্রাথমিক অবস্থায় জিটির কাছ থেকে স্যাফায়ার প্রস্তুতকারক চুল্লী কেনার চুক্তি করে অ্যাপল। তবে ছয় মাস পরে ওই চুক্তির শর্তাবলীতে বড় পরিবর্তন আনে অ্যাপল, সরাসরি স্যাফায়ারই কিনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর অ্যাপলের চাহিদা এতই বড় ছিল যে, নতুন ফ্যাক্টরির প্রয়োজন পরে জিটির। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপলের চাহিদা অনুযায়ী স্যাফ্যায়ার ডিসপ্লে তৈরি করতে পারলে বিশ্বে স্যাফায়ার স্ক্রিন উৎপাদনের হার একলাফে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যেত।

কিন্তু জিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আদালতে আবেদন করার পর আদালতে অ্যাপলের বক্তব্য, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য স্যাফায়ার সরবরাহ করতে পারেনি জিটি’।

স্যাফায়ার বোল প্রস্তুত করতে প্রয়োজন পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। তবে জিটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপলের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন কাজ চলছিল নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরিতে। এতে স্যাফায়ারের গুণগত মানে প্রভাব পরছিল। এছাড়াও প্রয়োজন ছিল পানি ও বিদুত্যের বিরতিহীন সরবরাহ। কিন্তু উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য বিকল্প বিদ্যুত ব্যবস্থা না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় অ্যাপল। ফলে বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে নষ্ট হয়ে যায় স্যাফায়ারের পুরো ব্যাচ।

সমস্যা এখানেই শেষ নয়। চুল্লিতে একটি স্যাফায়ার বোল তৈরি করতে সময় প্রায় একমাস। ইয়োল ডেভেলপমেন্টসের স্যাফায়ার ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞ এরিক ভিরে জানান, “প্রস্তুতকালে চুল্লির মধ্যে স্যাফায়ার ঠিকমত তৈরি হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রস্তুতপ্রণালীতে কোনো গোলমাল হলেও তা জানা যাবে একমাস পর চুল্লি খোলার পর। এমনকি কোনো গোলমাল ধরতে পারলে এবং সমাধান করার চেষ্ট করলেও, আসলেই সমাধান হয়েছে কি না তা-ও জানা যাবে প্রস্তুতপ্রক্রিয়ার শেষে।”

প্রস্তুত প্রক্রিয়া শেষে স্যাফায়ার বোল কাটা ও পলিশ করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও ছিল অ্যাপলের পছন্দের। কিন্তু প্রয়োজনমতো গুণগত মানের স্যাফায়ার বোল তৈরিতে ব্যর্থ হয় ওই যন্ত্রগুলো।

লক্ষণীয় ব্যাপার হল, অ্যাপল ও জিটির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী অ্যাপলের যাবতীয় শর্ত মেনে বাণিজ্যিক হারে স্যাফায়ার তৈরিতে বাধ্য ছিল জিটি। তবে সেই স্যাফায়ার কিনতে বাধ্য ছিল না অ্যাপল। জিটির মতে, “চুক্তিটি ছিল একতরফা।”

স্মার্টফোনের স্ক্রিনে স্যাফায়ার ব্যবহারের অ্যপলের এই পরিকল্পনার এখানেই শেষ কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। বর্তমানে অ্যাপল ওয়াচের একটি সংস্করণে স্যাফায়ার স্ক্রিন ব্যবহার হচ্ছে।