‘ভুয়া সংবাদ’ ঠেকানোর পদক্ষেপ জানালেন জাকারবার্গ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই ‘ভুয়া সংবাদ’ নিয়ে সমালোচনার মুখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক। এ নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের সমর্থনে একের পর পর এক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। কিন্তু তাও থামছে না অভিযোগের তীর। ‘ভুয়া সংবাদ’ ঠেকাতে ফেইসবুক কী করছে, এবার এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2016, 12:09 PM
Updated : 19 Nov 2016, 12:32 PM

১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ নিয়ে বর্ণনা দেন জাকারবার্গ। শুরুতেই তিনি বলেন, “আপনারা অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন ভুল তথ্য নিয়ে আমরা কী করছি, তাই আমি আপনাদের এ বিষয়ে জানাতে চাই।”

তিনি বলেন, “মূল কথা হচ্ছে- আমরা ভুলতথ্যের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ যেসব কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি অর্থপূর্ণ মনে করে সেগুলোর সঙ্গে তাদের যুক্ত করা, আর আমরা জানি মানুষ সঠিক তথ্য চায়। আমরা এই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি আর এই দায়িত্বটা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছি, কিন্তু এখনও অনেক কাজ করার আছে।”

এর আগে কোনো কনটেন্ট ভুয়া আর কোনটি সত্য তা বুঝতে ফেইসবুক সম্প্রদায়ের উপরই তারা নির্ভর করতেন বলেন জানান জাকারবার্গ। তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে ফেইসবুকের যে কেউ যে কোনো লিংক-কে মিথ্যা হিসেবে অভিযোগ করতে পারেন, আর ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগগুলোর সংখ্যা আর অন্যান্য বিষয়ের উপর পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে বিচার করে।  

এ ক্ষেত্রে কারিগরি আর দর্শনগত দিক থেকে সমস্যাগুলো ‘জটিল’ বলে মন্তব্য করেন জাকারবার্গ। তিনি বলেন, “আমরা মানুষকে একটি কণ্ঠ দিতে বিশ্বাস করি, এর মানে হচ্ছে  মানুষ যখন সম্ভব যা চায় তাই শেয়ার করতে দেওয়ার পথে যাওয়া। মতামত শেয়ার করতে যাতে নিরুৎসাহিত করা না হয় আর ভুলে যাতে সঠিক কনটেন্ট আটকে দেওয়া না হয় তা নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আমাদের সততার বিচারক আমরা হতে চাই না, বরং আমাদের সম্প্রদায় বা বিশ্বস্ত তৃতীয় পক্ষের উপর নির্ভর করতে চাই।” 

বরাবরের মতো এবারও ফেইসবুকের ভুলতথ্যের পরিমাণ ‘অপেক্ষাকৃত কম’ বলে দাবি করেছেন জাকারবার্গ। সাধারণত নিজেদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে নির্দিষ্টভাবে তারা জানান না, কিন্তু এবার বিষয়ে আগ্রহের পরিমাণ আর গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে তিনি ইতোমধ্যে হাতে নেওয়া কিছু প্রকল্পের কথা জানাতে চান বলে জানান। 

ওই স্ট্যাটাসে ফেইসবুকের প্রকল্পগুলো নিয়ে জাকারবার্গ-এর বক্তব্য বাংলায় হুবহু তুলে হরা হল-

  • শক্তিশালী শনাক্তকরণ পদ্ধতি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমরা করতে পারি তা হচ্ছে ভুল তথ্য শনাক্তে আমাদের সামর্থ্য বাড়ানো। এর মানে হচ্ছে মানুষ নিজেরাই শনাক্ত করার আগে তারা কোনগুলো শনাক্ত করবে তা চিহ্নিত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবস্থা আনা।
  • সহজ অভিযোগ ব্যবস্থা। মানুষের জন্য ভুয়া কনটেন্টগুলোর অভিযোগ পাঠানোর ব্যবস্থা আরও সহজ করলে তা আমাদের আরও দ্রুত ভুল শনাক্তে সহায়তা করবে।  
  • থার্ড পার্টি ভেরিফিকেশন। অনেকগুলো মর্যাদাপূর্ণ ফ্যাক্ট চেকিং সংগঠন আছে, আমরা কয়েকটির কাছে গিয়েছিও, আমরা তাদের কাছ থেকে আরও শেখার পরিকল্পনা করেছি।
  • সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের মান। নিউজ ফিডের বিভিন্ন লিংকের নিচে সংশ্লিষ্ট যে প্রতিবেদনগুলো দেখানো হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সীমাবদ্ধতা বাড়াচ্ছি।
  • ভুয়া সংবাদ অর্থনীতি ব্যহতকরণ। আর্থিকভাবে প্রণোদিত স্প্যাম থেকে অনেক ভুল তথ্য চালানো হয়। আমরা চলতি সপ্তাহে আমাদের ঘোষিত নীতিমালার মতো বিজ্ঞাপন নীতিমালা আর উন্নত বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান শনাক্তকরনের মাধ্যমে এই অর্থনীতি ভাঙ্গার চেষ্টা করছি।
  • কথা শোনা। আমরা সাংবাদিক ও সংবাদ খাতের অন্যান্যদের পরামর্শ পেতে তাদের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব, যাতে তাদের ফ্যাক্ট চেকিং ব্যবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি ও তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি। 

সবশেষে জাকারবার্গ বলেন, “এই ধারণাগুলোর কিছু কাজ করবে, কিছু করবে না। কিন্তু আমি আপনাদের জানাতে চাই আমরা সবসময় এটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি, আমরা বুঝি আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর এটি ঠিক করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।”