"বৃহস্পতি তে স্বাগতম!"

বৃহস্পতির কক্ষপথে নাসা তাদের মহাকাশযান 'জুনো' সফলভাবে উৎক্ষেপণে সক্ষম হয়েছে।

তাহমিন আয়শা মুর্শেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2016, 11:27 AM
Updated : 6 July 2016, 11:27 AM

'বৃহস্পতি তে স্বাগতম!' ভাষ্যকারের এমন আনন্দিত চিৎকার আর মূহুর্মূহু করতালিতে সরগরম হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্যাসাডিনায় অবস্থিত নাসার 'জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি'।

রোমান দেবী, 'জুনো' এর নামানুসারে জনশুন্য এই মহাকাশযানটির নামকরণ করা হয়। ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে সৌরযানটি পৃথিবী থেকে ১৪০ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ, বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে।

নিয়ন্ত্রকদের জন্য ৩৫ মিনিট ছিল উদ্বিগ্নের। উৎক্ষেপণের আগেই যদি মূল রকেটে আগুন ধরে যায় তাহলে রকেটের ইঞ্জিনের বেগ কমে যাবে এবং কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারবে না -এমনটা আশঙ্কায় ছিলেন তারা।

অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী, স্কট বোল্ট তার দলের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, "নাসার করা কাজের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজটাই তোমরা করেছ।" যদি এই অভিযান ব্যর্থ হত, তাহলে পাঁচ বছরব্যাপী ৮৯ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড খরচ করে নির্মিত এই রকেট মহাকাশের গর্ভে হারিয়ে যেত।

খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোযণা করে নাসা'র 'জুনো' মিশনের অ্যাকাউন্ট থেকে করা টুইটে বলা হয়, "ইঞ্জিন পুরোপুরি প্রস্তুত এবং কক্ষপথও খুঁজে পাওয়া গেছে। সব রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা প্রস্তুত। এবার #জুপিটার, পারলে ঠেকাও।"

জুনো পরবর্তী ২০ মাস বৃহস্পতির ঘন মেঘ আর মরিচীকার আড়ালে লুকানো সব কিছুর ছবি আর তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে। তা ছাড়া ওখানে পানির উপাদান, চৌম্বক ক্ষেত্র আর মূল মজ্জা নিয়ে গবেষণা করবে এই মহাকাশযান।

এ ছাড়াও, উৎক্ষেপকণটি বৃহস্পতির পুরু বায়ুমণ্ডলে পানির অস্তিত্ব অনুসন্ধানের সঙ্গে সঙ্গে সূর্য থেকে এর দূরত্বও পরিমাপ করবে।

এটি বৃহস্পতিতে ঘটা শত বছরের পুরনো ঝড়ে সৃষ্ট বিখ্যাত 'গ্রেট রেড স্পট' এর বিষয়ে তথ্য দেবে।

গবেষকদের মতে, "সৌরজততের বৃহত্তম এবং 'বাজে' গ্রহ "হওয়ায় এই মিশন এখনও বড় বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এই গ্রহটি উচ্চ তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে বেষ্টিত এবং এতে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। তা ছাড়াও এতে একটি ধূলা-বালির বলয় রয়েছে। জুনো থেকে পাওয়া তথ্যমতে এতে পাওয়া পাথর এর পরের প্রহ 'শনি' তে পাওয়া পাথরের মতোই।

১৯৯৫-২০০৩ সালের পর নাসা থেকে বৃহস্পতির কক্ষপথে পাঠানো মহাকাশযানের মধ্যে 'জুনো' দ্বিতীয়।

মহাকাশবিষয়ক সাংবাদিক সারাহ ক্রুডাস স্কাই নিউজ ডটকমকে বলেন, " আমরা এখনও জুপিটার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি না। আমরা সত্যিই জানি না কি এটি কী দিয়ে তৈরি হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "এটা অনেকটা সৌর জগতের ক্ষুদ্র সংস্করণ, যা তে অনেকগুলো 'চাঁদ' রয়েছে- তাদের তিনটি আমাদের চাঁদ-এর চেয়ে অনেক বড়। অন্য আরেকটি 'চাঁদ' বুধ গ্রহের চেয়ে বড়।'

"এটা আরেকটি দুনিয়া যা সম্পর্কে আমরা এখনও কিছুই জানিনা"- যোগ করেন তিনি।

বৈজ্ঞানিক যন্ত্র হিসেবে জুনো বহন করছে -ইতালিয়ান জ্যোতিবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি, রোমান দেবতা জুপিটার আর তার স্ত্রী জুনো-কে চিত্রায়িত করা তিনটি লেগো ফিচার। লেগোটি প্লাস্টিকের বদলে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যাতে মহাকাশযাত্রায় প্রতিকূল পরিবেশে এর কোন ক্ষতি না হয়।

২০১১ সালের ৫ অগাস্ট ফ্লোরিডার কেইপ ক্যানাভেরাল থেকে 'জুনো' তার যাত্রা শুরু করে।

২০১৮ তে এই মিশন শেষে, নাসা 'জুনো'-কে নিরাপদভাবে 'ধ্বংস' করে দেবে যাতে এর 'প্রোব' বিস্ফোরিত হয়ে গ্রহটির বা তার কোনো চাঁদের পরিবেশ দূষণ না করে।

</div>  </p>