কমদামী স্মার্টফোন: ভাল-মন্দ 

সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য রয়েছে বিচিত্র ধরনের স্মার্টফোন। তবে সে চাহিদা পূরণের জন্য নিজের গাঁট থেকে খসতে পারে পাঁচ অঙ্ক মোটা দাগের ডলারের হিসেব, কিংবা মাত্র পঞ্চাশ ডলার খরচ করেই কেনা সম্ভব পছন্দসই স্মার্টফোন।

শরীফুল হক আনন্দবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2015, 10:26 AM
Updated : 6 August 2015, 01:17 PM

তবে খরচ করে কেনা স্মার্টফোন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছি কিনা- এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় ভোক্তার মনে।

উদাহরণস্বরুপ টেনে আনা যেতে পারে ভারটু রেড গোল্ড ব্ল্যাক ডিএলসি স্মার্টফোনটির কথা। ৩৭,৪৭০ মার্কিন ডলার (বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা) মূল্যের এই সেটটিতে রয়েছে দুর্দান্ত রোবাস্ট স্যাফায়ার ডিসপ্লে স্ক্রিন এবং এর ইন্টারনাল মেমরি সাপোর্ট করে ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, স্ট্যান্ড বাই ব্যাটারি ক্ষমতাও প্রায় ৩০০ ঘন্টা।

ভারটু এর হাই এন্ড স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে দামের অঙ্কটাও বেশ চড়া, তবে ভাল একটি স্মার্টফোনের জন্য এত খরচ করারও প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ‘সিএসএস’ এর বিশেষজ্ঞ বেন উড।

“আমার মতে ২০০ ইউরোতেই এখন ভাল একটি স্মার্টফোন পাওয়া সম্ভব”, বিবিসিকে একটি সাক্ষাতকারে জানান বেন। এ ছাড়াও কথা বলেন বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের ক্রমান্বয় অগগতির প্রসঙ্গে।

“স্মার্টফোনের বিবর্তনে এখন আমরা দারুণ একটা সময়ে এসে পৌঁছেছি। সেটগুলো এখন তুলনামূলক দুর্দান্ত, সাশ্রয়ীও। আপনাকে এর দাম নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা করতে হবে না। একটি ভাল ক্যামেরা, কর্মক্ষম প্রসেসরসহ সেট পেতে পারেন খুব সহজেই”- জানান বেন।

এদিকে মোবাইল অপারেটর ‘ইই’ জুলাই এর শেষে বিলেতের বাজারে এনেছে মাত্র ৪৯ ইউরো দামের ‘দ্য রক’ স্মার্টফোনটি। এতে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, ৪০০ ঘন্টা স্ট্যান্ড বাই ব্যাটারি ক্ষমতায় চলে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। তবে, তুলনায় পিছিয়ে আছে ইন্টারনাল স্টোরেজের দিক দিয়ে, যার ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৮ জিবি।

এমন স্মার্টফোনকে ‘সতর্কতা’র সঙ্গেই কেনার পরামর্শ দিলেন বেন, “৮ জিবিরও কম ইন্টারনাল স্টোরেজের একটি সেট কেনার সময় আমি অবশ্যই দুশ্চিন্তায় ভুগবো, কেননা মাত্র কয়েকটি আপ্লিকেশন ইনস্টল করার পরেই এর মেমরি ফুরিয়ে যায়”।

‘ওয়ানপ্লাসওয়ান’ এর সাফল্যের পর চীনা প্রস্তুতকারক ‘ওয়ানপ্লাস’ বাজারে এনেছে ‘ওয়ানপ্লাস টু’। বিলেতের বাজারে এর মূল্য ধরা হয়েছে ২৩৯ ইউরো। আগের ফোনটির মতই এবারও শুধু ‘আমন্ত্রিত’ ব্যক্তিরাই পাচ্ছেন এই সেটটি। প্রথম ‘ওয়ানপ্লাসওয়ান’ সেটটি দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৯০,০০০ মানুষকে আমন্ত্রণের মাধ্যমে।

 

বিক্রয়ের গোপনীয়তা

দুর্দান্ত স্পেসিফিকেশনের একটি স্মার্টফোন প্রস্তুতে খরচ কিভাবে সর্বনিম্ন রাখা যায়- সেটিও একটি প্রশ্ন।

চীনা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ‘জিয়াওমি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিউগো বারা এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন ‘টেক ক্রাঞ্চ’ এর সঙ্গে। জানান, স্মার্টফোনগুলোর লং লাইফ সম্পর্কে তাদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন কিছু তথ্য।

“একটি পণ্য ১৮ থেকে ২৪ মাসের জন্য সংরক্ষণ করে তার উপর তিন কিংবা চার দফায় ছাড় দেওয়া হয়। আমাদের ‘এমআইটু অ্যান্ড এমআইটু’ তেমনই একটি ডিভাইস। এতগুলো ছাড় দেবার কারণ একটাই, আমরা প্রয়োজনীয় কম্পনেন্ট এর খরচগুলো ক্রমান্ময়ে কমিয়ে আনতে পারি।”

‘দ্য অ্যাপল ফ্যাক্টর’

২০১৪ এর নভেম্বরে ‘টিয়ারডাউন’ নামক একটি গবেষণা ফার্ম আইফোন সিক্স এবং আইফোন সিক্স প্লাস এর উপর একটি গবেষণা চালায়। তাদের গবেষণায় সেট দুইটির বিভিন্ন অংশ এবং সেগুলো জোড়া দেওয়ার খরচ আসে যথাক্রমে ২২৭ এবং ২৪২ মার্কিন ডলার।

তবে বিক্রয় মূল্যটা এর থেকে বেশ চড়া। আইফোন সিক্সের সর্বনিম্ন মূল্য এখন বাজারে ৬৫০ মার্কিন ডলার, এবং সিক্স প্লাসের মূল্য সেখানে ৭৫০ মার্কিন ডলার। এত দাম নির্ধারণের পরও কমেনি আইফোনের বিক্রয়ের মাত্রা। এপ্রিল থেকে জুন ২০১৫ এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেছে ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ আই ফোন।

এ ব্যাপারে অবশ্য আইফোনের ‘একনিষ্ঠ’ গ্রাহকদের প্রসঙ্গই তুলে এনেছেন বেন উড, “যে ব্যক্তির আইফোন আছে, তিনি অ্যাপলের পণ্য ব্যবহারের অভিজ্ঞতাটা দারুণভাবে উপভোগ করেন। আমি সবসময়েই বলে এসেছি, আইফোন হল ইগলস-এর গান ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র মত। একবার ভেতরে ঢুকে গেলে আর সহযে বের হয়ে আসা যায় না।”

 

নিরাপত্তা প্রসঙ্গ

কমদামী সেটগুলোতে নিরাপত্তার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাকিং এবং ডেটা প্রাইভেসির জন্য স্মার্টফোনের সফটওয়্যারের আপডেটটি থাকতে হবে যথাসময়ে।

সাধারণ তুলনামূলক দামী স্মার্টফোনগুলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমেই চলে। তবে এটি অ্যাপলের তুলনায় যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, ফলে হ্যাক হবার সম্ভাবনাও প্রবল।

কমদামী স্মার্টফোনগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে কথা বলেন সারে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যালান উডওয়ার্ড, “সস্তা সেটগুলো খারাপ নয়, কেননা হার্ডওয়্যারের খরচ ক্রমেই কমছে। তবে অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ব্যাপারটি সম্পূর্ণই সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীল।”

প্যাচ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কম দামী সেটগুলোতে সমস্যা সৃষ্টি হয় নতুন কিছু আপগ্রেড করবার সময়। অপারেটিং সিস্টেমের দৃঢ় নিরাপত্তার কারণেই এমনটি ঘটে থাকে। এসকল ব্যাপারেও বিস্তারিত কথা বলেন উডওয়ার্ড। ‘এমন নয় যে নির্দিষ্ট প্রযুক্তির মান এর পেছনে মূল কাজটি করে, বরং বিক্রেতারাই এই প্রয়োজনীয় আপগ্রেডগুলো করেন না।”