‘বাংলাদেশের ফুটবল পিছিয়ে পড়েনি তবে...’

ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন। মাঝে ব্যবসায়িক কাজে বাংলাদেশে এসেছেন একাধিকবার। এবার চিরিং লোপসাং গুরুং এসেছেন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে নেপালের দল মানাং মার্সিয়াংদির কোচ হিসেবে। নেপালের ফুটবলের ক্রমোন্নতি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়েও নিজের মনোভাবটা জানালেন ৫১ বছর বয়সী এই কোচ।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 01:48 PM
Updated : 23 Feb 2017, 01:48 PM

প্রশ্ন: নেপালের ফুটবল তো বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের চ্যাম্পিয়ন তারা। এবার এএফসি সলিডারিটি কাপে সেরাও হয়েছে। এই উন্নতির পেছনের গল্পটা একটু বলবেন?

চিরিং লোপসাং: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের ফুটবলের উন্নতির কারণ হচ্ছে, ফুটবলাররা এখন আগের চেয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। অনুশীলনের জন্য ভালো মাঠ আছে। ম্যানেজমেন্ট (নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের) বদলেছে, তারাও পর্যাপ্ত সমর্থন দিচ্ছে। বিদেশি কোচও আছে।

অতীতের চেয়ে বর্তমান ফুটবলার আরও বেশি মেধাবী হওয়াটাও কি আরেকটা কারণ?

চিরিং লোপসাং: আমি মনে করি, মেধার দিক থেকে আমাদের এই ফুটবলার আগের ফুটবলারদের মতোই। কিন্তু এখন অনেক বেশি টেকনোলোজি আছে। অতীতের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা আছে।

নেপালের ফুটবলের তুলনায় কিন্তু বাংলাদেশ পেছাচ্ছে...

চিরিং লোপসাং: দেখুন, এখন সব দেশের ফুটবলেই পরিবর্তন আসছে। কেবল আমাদের নয়, ভুটানের কথাও ধরুন। তারাও খুব ভালো করছে। অতীতে তারা পিছিয়ে ছিল কিন্তু এখন তারাও ভালো করছে। ঠিক জানি না, বাংলাদেশ কি কারণে ভালো করতে পারছে না। উন্নতি করতে পারছে না। অথচ আমি মনে করি, বাংলাদেশের ফুটবলাররা নেপালের ফুটবলারদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু তারা পারছে না। হতে পারে, সংগঠকরা ঠিকঠাক দিকনির্দেশনা দিতে পারছে না।

ভুমিকম্পের কারণে ২০১৩-১৪ মৌসুমের পর লিগ হচ্ছে না নেপালে। তারপরও আপনাদের ফুটবলের মান না পড়ার কারণ কি সংগঠকদের ভুমিকা?

চিরিং লোপসাং: যদি আপনি সাফল্য পেতে চান, তাহলে অবশ্য আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকতে হবে। ঠিকমতো অনুশীলন করতে হবে। আমি মনে করি, এটাও মূল কারণ।

একাডেমিগুলোর ভুমিকা কেমন? বিশেষ করে ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠা করা একাডেমির?

চিরিং লোপসাং: একাডেমির ভালো ভূমিকা রয়েছে। আসলে নেপালের ক্লাবগুলোর কোনো অ্যাকাডেমি নেই। রাজধানীর বাইরে কিছু একাডেমি আছে। কাঠমাণ্ডু ও আরও কয়েকটি জেলায় একাডেমি আছে। তারা তৃণমূল পর্যায় থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন বাছাই করে এবং ট্রেনিং দেয়। অনূর্ধ্ব-১২ থেকে নিয়ে আসা হয়। তাদের থাকা, খাওয়া, অনুশীলন, শিক্ষা সব সুবিধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে তারা বিভিন্ন ক্লাবে যায়।

এই উঠতি ফুটবলারদের দেখভাল কি লাইসেন্সধারী কোচেরা করেন?

চিরিং লোপসাং: হ্যাঁ। আমি যতদূর জানি, আমাদের একশর বেশি ‘সি’ লাইসেন্সধারী, ৫০-৬০ জন ‘বি’ লাইসেন্সধারী ও ৮ জন ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ আছেন। আমিও ‘এ’ লাইসেন্স করা কোচ।

একাডেমির ব্যয়ের জোগানটা কোথা থেকে আসে?

চিরিং লোপসাং: সরকারও কিছু আর্থিক সহায়তা করে। তবে সিংহভাগই ফিফা, এএফসি থেকে আসে এবং কর্তৃপক্ষ অর্থের সঠিক ব্যবহারও করে।

নেপালের ফুটবলারদের ইউরোপের তৃতীয় বা চতুর্থ সারির দলে খেলার কথাও শুনেছি।

চিরিং লোপসাং: এখনও ইউরোপের কোনো ক্লাবে আমাদের কেউ খেলেনি। তবে তারা এখন ইউরোপে ট্রায়ালে যায়; অবশ্যই এটা নেপালের ফুটবলের জন্য ভালো। আমাদের ফুটবলাররা এখন দেশের বাইরে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ারে লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। এটা শুধু ক্লাব ফুটবলকে নয়, জাতীয় দলের উন্নতিতেও সাহায্য করছে।

ইউরোপের ক্লাবগুলোর সঙ্গে এই যোগাযোগটা কিভাবে হয়?

চিরিং লোপসাং: এই যোগাযোগটা কোনো এজেন্ট করে দেয় না; আমাদের ফুটবল ফেডারেশন বিভিন্ন ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই পথটা করে দেয়। এ বছর নেপালের তিন ফুটবলার ইউরোপে ট্রায়াল দিতে যাবে।

এবার মানাং মার্সিয়াংদিকে নিয়ে বলুন

চিরিং লোপসাং: নেপালে এটি বিখ্যাত দল। আমরা ঘরোয়া ফুটবলে টানা তিন শিরোপা জিতে এখানে এসেছি। নেপালের সব ফুটবলারই এই দলটার হয়ে খেলতে চায়। আমাদের ম্যানেজমেন্টও খুব ভালো। ফুটবলারদের জন্য সব সুবিধা তারা নিশ্চিত করতে চায়। একাডেমি থেকে উঠে আসা তিন-চার জন আমাদের দলে আছে।

২০১৩ সালে ভুটানের কিংস কাপ জয়ের পর ক্লাব পর্যায়ে দেশের বাইরে আর কোনো সাফল্য আছে?

চিরিং লোপসাং: ভুটানের ওই কিংস কাপই আমাদের দেশের বাইরে কোনো টুর্নামেন্টে প্রথম সাফল্য।  ওই সাফল্যের পর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছি। মাঝে আমরা এএফসি কাপে মূল পর্বে উঠেছি। অবশ্য কিংস কাপে ২০০৪ সালে প্রথম খেলতে গিয়ে আমাদের দল রানার্সআপ হয়েছিল। 

ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। পতেঙ্গায় গিয়েছিলেন সমুদ্র সৈকত দেখতে...

চিরিং লোপসাং: আসলে আমাদের যেতে খুব বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। অন্তত দুই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। আমি অনেক সৈকত দেখেছি, এটা একটু অন্যরকম। খেলার কোনো জায়গা নেই!

১৯৮৬ সালে এসেছিলেন ক্লাব কাপ খেলবে। এরপর একাধিকবার আসা, দেখা থেকে এখানকার ফুটবলকে কেমন দেখছেন? পিছিয়ে পড়ছে কি?

চিরিং লোপসাং: আমি মনে করি না বাংলাদেশের ফুটবল পিছিয়ে পড়ছে। আসলে অন্য দেশগুলো ভালো করছে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। হতে পারে বাংলাদেশের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তাই আগের জায়গাতেই আটকে রয়েছে। যতদূর শুনেছি, এখানকার ফুটবলাররা নেপালের ফুটবলারদের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পায়। ভালো সুবিধাও পায়।

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবে দর্শক খরা যে ফুটবলের পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলছে…

চিরিং লোপসাং: এখানকার ফাঁকা গ্যালারি দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। যদি এই টুর্নামেন্ট নেপালে হতো, তাহলে প্রতিটি ম্যাচে গ্যালারি ভরা থাকত। এটাই ফুটবলের ক্রেজ। হয়ত এখানকার সবাই এখন ক্রিকেট পছন্দ করছে। ফুটবলকে নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই।