বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে শক্তি আর তারকাদ্যুতিতে প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার জালে বাংলাদেশ বল জড়াবে বলে স্বপ্ন দেখেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থে বাংলাদেশ ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি খেলবে। এর আগে আগামী শনিবার মালয়েশিয়ার বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মামুনুল ইসলামরা।
মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জুয়েল জানান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিজের সেরাটা দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি।
জাহিদ হাসান এমিলি, এনামুল হক, জাহিদ হোসেন, বাতেন মজুমদার কমল, তকলিস আহমেদ, আমিনুর রহমান সজীব-এই ছয় জনের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের আক্রমণভাগে আছেন জুয়েলও। ছয় জনের মধ্যে তার বয়সই সবচেয়ে কম। আগামী ২৫ ডিসেম্বর কুড়ি বছর পূর্ণ হবে মোহামেডানের এই ফরোয়ার্ডের।
নিজেকে সৌভাগ্যবান মেনে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠা
দক্ষিণ কোরিয়ার এশিয়ান গেমস ও ইরাকে এএফসির একটি টুর্নামেন্ট-বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এই দু'বার দেশের বাইরে খেলতে যাওয়া হয়েছে জুয়েলের। গত জুনে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের বিপক্ষে আলো ছড়িয়ে কোচের আস্থা অর্জন করেন তিনি। কোচ আর অধিনায়ক সেবার বেশ প্রশংসাও করেন তার। তাতে জুয়েলের আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়েছে।
“এবারই প্রথম জাতীয় দলের হয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছি। পরিবারের সবাই খুশি। আমিও খুশি। কোচ সুযোগ দিলে অবশ্যই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব; সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি। নিজেকে সত্যিই খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।”
এশিয়ান কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও চারবার বিশ্বকাপ খেলা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের ঘোষণা নেই; তবে জুয়েলের কণ্ঠে আছে প্রতিপক্ষের সম্মান আদায় করে নেওয়ার প্রত্যয়।
“(অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে) আমাদের চেষ্টা থাকবে গোল না খাওয়ার। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলব আমরা। হার-জিত পরের কথা; সবার লক্ষ্য থাকবে ভালো লড়াই করার।”
মামুনুলদের স্নেহে ‘সাহসী’ তিনি
লিওনেল মেসি যেমন রোনালদিনিয়োর স্নেহে বার্সেলোনায় বেড়ে উঠেছেন, নেইমার তেমনি বেড়ে উঠছেন মেসির ছায়ায়। জুয়েল জানালেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমের পরিবেশটাও অনেকটা সেরকমই। এমিলি, এনামুল, জাহিদ, মামুনুলদের স্নেহে আর শাসন তাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে বলে জানান জুয়েল। সিনিয়র সতীর্থরা তাকে ইচ্ছেমতো খেলার ছাড়পত্রও দিয়ে দিয়েছেন।
“আমি সবার ছোট বলে সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে; স্নেহ করে। এমিলি, এনামুল ভাই সবসময় কিভাবে উন্নতি করা যায়, সে পরামর্শ দেন। জাহিদ ভাইও অনেক কিছু শেখান; সাহস দেন আর মামুনুল ভাই তো আমাকে বলে দিয়েছেন-ইচ্ছেমতো খেলবে; সবসময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে।”
মালয়েশিয়ার বিপক্ষে চাই প্রতিশোধ
বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের সেই দুটি হারের ক্ষত এখনও টাটকা হয়ে আছে জুয়েলদের কাছে। গ্রুপ পর্বে ১-০ গোলে হারের পর ফাইনালে ৩-২ ব্যবধানে হেরে শিরোপা স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশের। এবারের প্রীতি ম্যাচে সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়াটা লক্ষ্য বলে জানালেন মোহামেডানের এই ফরোয়ার্ড।
“গোল্ড কাপে আমরা দু'বার ওদের কাছে হেরেছিলাম। এবারের প্রীতি ম্যাচটি তাই আমাদের জন্য সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ। আর ওদেরকে ওদের মাঠে হারাতে পারলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা অস্ট্রেলিয়া যেতে পারব।”
যেভাবে ফুটবলার হয়ে ওঠা
জুয়েল জানালেন কৃষক বাবা কিংবা গৃহিনী মায়ের কেউই তার ফুটবলার হওয়ার পথ আগলে দাঁড়াননি। তুষার নামে এলাকার এক বড় ভাই টাকা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম দিয়ে স্বপ্ন সত্যি হতে সাহায্য করেছেন।
ছিপছিপে গড়নের তরুণ জুয়েল বলতে থাকেন, “ইন্টার স্কুল খেলতে খেলতে মহাখালী একাদশে সুযোগ পেলাম; এরপর ওয়ারির হয়ে দ্বিতীয় বি-লিগ খেললাম। মোহামেডানে যোগ দেওয়ার আগে খেলেছি ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে।”
অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আসার ক্লান্তি নেই জুয়েলের। বরং সব বাঁধা পেরিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ায় সাহসটাই বেশি তার। তাই তো অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সামনে রেখেও বলে দিলেন, “বার্সেলানা, রিয়ালও ছোট দলের কাছে গোল খায়; ড্র করে। (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে) আমাদেরও এমন দিন আসতে পারে।”