মহাকর্ষ তরঙ্গ: লাইগোর গবেষকরা পাচ্ছেন ব্রেকথ্রু পুরস্কার

মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে তিন মিলিয়ন ডলারের বিশেষ ‘ব্রেকথ্রু’ পুরস্কার জিতেছেন লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরির (লাইগো) তিন প্রতিষ্ঠাতাসহ ১০১২ জন বিজ্ঞানী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2016, 02:16 PM
Updated : 4 May 2016, 02:16 PM

গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়, শত বছর আগে আলবার্ট আইনস্টাইন যে মহাকর্ষ তরঙ্গের (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) কথা বলেছিলেন, তা শনাক্ত করায় লাইগো ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের এ পুরস্কার দেওয়ার কথা জানিয়েছে ব্রেকথ্রু প্রাইজ ফাউন্ডেশন।

এর মধ্যে লাইগোর তিন প্রতিষ্ঠাতা কিপ থর্ন, রেইনার উইস ও রোনাল্ড ড্রেভার পাবেন এক মিলিয়ন ডলার। দুই মিলিয়ন ডলার বাকিদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। 

বছরের শেষ দিকে এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এই গবেষকদের মধ্যে দুই বাংলাদেশিও রয়েছেন। এরা হলেন- নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম শাহরিয়ার ও অরিগন বিশ্ববিদ্যালয়ের দীপঙ্কর তালুকদার

আনন্দবাজার জানিয়েছে, বিজয়ীর তালিকায় রয়েছেন ভারতীয় পাঁচ বাঙালি- সোমক রায়চৌধুরী, তরুণ সৌরদীপ, সুকান্ত বসু, আনন্দ সেনগুপ্ত ও সঞ্জিত মিত্র।

পুরস্কার পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লাইগোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা থর্ন দলের সবাইকে এর কৃতিত্ব দিয়েছেন বলে গার্ডিয়ানের খবরে জানানো হয়।

“এ (মহাকর্ষীয়) তরঙ্গ মহাকাশকে বিশ্লেষণ করার নতুন পথ দেখাবে। কোন কোন তরঙ্গ শক্তিশালী, স্থান ও কাল কোথায় কোথায় বেঁকে যাচ্ছে, ব্ল্যাক হোলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ এবং বিগ ব্যাং নিয়ে জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়ার আদর্শ উপকরণ হতে পারে এটি,” বলেন তিনি। 

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর প্রতি সেকেন্ডে এর কী কী পরিবর্তন হয়েছে, তা আরেকটু বিশদভাবে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার এ অধ্যাপক।

জার্মান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ১৯১৫ সাল তার সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্বে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা প্রকাশ করেন। ৫০ বছরের গবেষণার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লাইগো সেই তরঙ্গ শণাক্ত করতে পারার দাবি জানায়।

ব্রেকথ্রু পুরস্কারপ্রাপ্তির পর বিজ্ঞানীদের সেই দাবি ‘প্রাতিষ্ঠানিক রূপ’ পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ব্রেকথ্রু পুরস্কার নির্বাচক কমিটিরও প্রধান এডওয়ার্ড উইটেনকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান লিখেছে, “আমি যখন গ্রাজুয়েট স্কুলে পড়তাম, তখন এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ব্যাপারটা ছিল রূপকথা; কিন্তু লাইগোর পর্যবেক্ষণ সেই রূপকথাকে বাস্তবে পরিণত করেছে।”

এবারের ব্রেকথ্রু পুরস্কারজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে ২০১৩ সালের বিজয়ী স্টিভেন হকিং বলেছেন, “এই আবিষ্কারের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথমত, সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্বের প্রমাণ ও ব্ল্যাক হোলের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে করা ভবিষ্যৎবাণীর জন্য, দ্বিতীয়ত, এই আবিষ্কার জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করবে, গবেষকদের বাধ্য করবে ভিন্ন দৃষ্টিতে মহাকাশকে দেখতে।”

সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে ২০১২ সালে ব্রেকথ্রু পুরস্কার চালু করেন রাশিয়ার ধনকুবের ইউরি মিলনার। ফেইসবুকের মার্ক জাকারবার্গ ও টুয়েন্টিথ্রি এন্ডমি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এ্যান ওসিসকিও আছেন এই উদ্যোক্তাদের তালিকায়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্রেকথ্রু ফাউন্ডেশন পুরস্কার বাবদ বিজ্ঞানীদের হাতে ১৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি তুলে দিয়েছে বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।