রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এক জঙ্গি আস্তানা ঘিরে প্রায় দেড় দিন ধরে পুলিশের অপারেশন ‘সান ডেভিল’ এর সমাপ্তি হয়েছে ছয়জনের মৃত্যু আর বোমা-পিস্তল উদ্ধারের মধ্য দিয়ে।
Published : 12 May 2017, 02:14 PM
গোদাগাড়ীর জঙ্গি আস্তানায় ১১টি বোমা, পিস্তল
গোদাগাড়ীর জঙ্গি আস্তানায় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল
গোদাগাড়ীর জঙ্গি পরিবারের অস্ত্র হাতে হামলার দৃশ্য ভিডিওতে
রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল আরিফ শুক্রবার বেলা ১টায় উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের সমাপ্তি টানেন।
ওই গ্রামের শেষ সীমায় মাঠের মধ্যে বিচ্ছিন্ন এক টিনের বাড়ি বুধবার রাত ৩টার দিকে ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বৃহস্পতিবার সকালে এই অভিযানে পাঁচজন নিহত হন, যারা সবাই জেএমবির সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য। আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা জঙ্গিদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী।
রাতে বিরতি দিয়ে শুক্রবার সকালে শুরু হয় অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়। পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ওই বাড়িতে ঢুকে অস্ত্র ও বোমার সন্ধান পান। পরে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়, সরিয়ে নেওয়া হয় পাঁচ জঙ্গির লাশ।
অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল বলেন, সেখানে ১১টি বোমা, একটি পিস্তল, গানপাউডারসহ বোমা তৈরির কিছু সরঞ্জাম ও জিহাদি বই পাওয়া গেছে।
সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়া পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তার আট বছরের ছেলে ও তিন মাসের মেয়েকেও সরিয়ে নেয় পুলিশ।
নিহতদের মধ্যে আশরাফুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীপুর চরচাকলা গ্রামের আবদুল হকের ছেলে। তিনি একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সুমাইয়া।
মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজম তৌহিদ জানান, সুমাইয়ার স্বামী জহুরুল জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত চারমাস ধরে কারাগারে আছেন।
জহুরুলের বাড়ি গোদাগাড়ির দিয়ার মানিকচরে। এক সময় এলাকার মানুষ তাকে ‘পল্লী চিকিৎসক’ হিসেবে চিনলেও পরে তিনি জেএমবিতে জড়ান বলে চেয়ারম্যান আজমের ভাষ্য।
অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল বলেন, “সুমাইয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আশরাফুল একজন বড় মাপের জঙ্গি।... সুমাইয়াকে নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। আর তার ছেলেমেয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।”
রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মাছমারা বেনীপুর গ্রামে মাঠের মধ্যে মাস দুই আগে বাঁশ আর টিন দিয়ে ওই ঘর তোলেন সাজ্জাদ। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি ওই বাড়িতে থাকতেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের খুব একটা মেলামেশা ছিল না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাজ্জাদ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন। আর তার দুই ছেলে আলামিন ও শোয়েব করতেন কৃষিকাজ।
অভিযানের প্রস্তুতির মধ্য বৃহস্পতিবার সকালে আত্মসমর্পণের আহ্বান উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সাজ্জাদ ও তার পরিবারের কয়েকজন। বাইরে থাকা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান তারা।
ওই ঘটনার ভিডিওতে এক নারীকে ধারালো অস্ত্র হাতে কাউকে কোপাতে দেখা যায়। লুঙ্গি পরিহিত এক পুরুষ জঙ্গির হাতে ছিল শাবল বা বল্লমজাতীয় কিছু।
ওই হামলায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হন, নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান আবদুল মতিন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বারি বলেন, “সাজ্জাদ একসময় জামায়াতের কর্মী ছিলেন। কিন্তু বছর দুয়েক আগ থেকে তার চলাফেরা সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। তার বাড়িতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসত। তারা কারা এমন প্রশ্নে কখনও জামাতার আত্মীয়, কখনও ঢাকার আত্মীয় বলে পরিচয় দিত।”
সাজ্জাদের আরেক ভাই মনিরুল ইসলামও জেএমবি সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছেন মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুজার উদ্দিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মনিরুল চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর আট জেল খেটেছেনে। এক বছর আগে ছাড়া পেয়ে এখন গ্রামের বাড়িতে মুরগির খামার করেন। থানায় তাকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়।”
অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল জানান, ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মাছমারা গ্রামে সাজ্জাদের বাবার ভিটা। সাজ্জাদের মা লাশ নিতে না চাওয়ায় পুলিশই দাফনের ব্যবস্থা করবে।