জঙ্গির বাপ হওয়া অপমানের, লজ্জার: মোস্তফার বাবা

জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের প্রিজনভ্যানে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার মোস্তফার বাবা-মার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তারা ছেলের বিচার চান। পাশাপাশি যারা মোস্তফাকে ‘জঙ্গি’ বানিয়েছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2017, 12:24 PM
Updated : 9 March 2017, 12:24 PM

মোস্তফার বাবা মোফাজ্জল হোসেন ও মা আছিয়া খাতুন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন।

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সোমবার ঢাকার আদালতে হাজিরা শেষে ময়মনসিংহ আসার পথে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় মুফতি হান্নানসহ ১৯ আসামিকে বহনকারী প্রিজনভ্যান লক্ষ্য করে বোমা হামলা হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে মোস্তাফা কামালকে গ্রেপ্তার এবং অগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমা ও চাপাতি উদ্ধার করা করা হয়।

তারাকান্দা উপজেলার পূর্ব পাগুলী গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “তিন ছেলে, এক মেয়েকে বাংলা লাইনে লেখাপড়া করাইছি। মেজ ছেলেকে দ্বিনি লাইনে লেখাপড়া করাব, বংশের মধ্যে বড় আলেম হবে; নাম-ডাক হবে, বাপ-দাদা ও বংশের মানুষ কেউ মারা গেলে জানাজা পড়াবে; বাড়ির পাশের দাদার প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ইমামতি করবে-এই আশায় ক্ষেতে খামারে কাজ করে অনেক কষ্টে মোস্তফারে মাদরাসা লাইনে পড়তে দিলাম।

“কিন্তু আজ ছেলে জঙ্গি হয়ে সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। জঙ্গির বাপ হওয়া যে কতটা অপমানের, কতটা লজ্জার এ কথা কারে কই। এখন আর মানুষের সামনে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না।”

তিনি আরও বলেন, মোস্তফা ছোটবেলা থেকেই খুব সহজ সরল ছিলেন, নরসিংদী পড়তে গিয়েই বিপথগামীদের সাথে মিশে ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ডে’ জড়িয়ে পড়েছেন।

মোস্তফার মা আছিয়া খাতুন বলেন, পাশের গ্রামের দাদরা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর বড় আলেম বানানোর জন্য তাকে তারাকান্দা বড় মসজিদ হেফজ বিভাগে ভর্তি করা হয়।

“২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করে সে হাফেজ হয়। পরে ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদের হেফজ বিভাগে হেফজ শুনানি করে।”

এরপরই তাকে নরসিংদী শেখের চর কওমি মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। ৪/৫ মাস পরপর ছুটি পেলে মোস্তফা বাড়ি আসতেন। তিনি সহজ সরল এবং খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন বলে জানান আছিয়া।

তিনি গর্বভরে বলেন, এক বছর আগে মোস্তফার দাদা হাজী মো. মমরোজ আলী মারা গেলে বাড়ি এসে মোস্তফা তার জানাজা পড়িয়েছে।  

তারাকান্দা বড় মসজিদের খতিব মাওলানা সাইদ সাইফী বলেন, মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে ৪/৫ বছর লেখাপড়া করেছে মোস্তফা। সে সহজ-সরল এবং হাবাগোবা বোকা প্রকৃতির ছিল।

ময়মনসিংহ জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদের অধ্যক্ষ আব্দুল হক বলেন, তার মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করার পর ছাত্ররা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়াবে এটা বিশ্বাস করার মতো না।

তবে অভাবের তাড়নায় অর্থনৈতিক কারণে প্ররোচিত হয়ে মোস্তফা জঙ্গি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

বালখাঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুদু বলেন, খুব কষ্টে শুধু কৃষির উপর নির্ভর করে এই পরিবারটির সংসার চলছে।

হান্নানের প্রিজনভ্যানে হামলার ঘটনায় সোমবার রাতেই টঙ্গি থানায় পুলিশ মামলা করেছে। মঙ্গলবার নরসিংদী থেকে মোস্তফার কথিত সহযোগী মিনহাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার মিনহাজুলকে তিন দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেয় আদালত।