মা-মেয়ে হলেন ধুনটের সেরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী

এবার ধুনট উপজেলার সেরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের যমুনা পারের স্কুলশিক্ষক মা ও তার স্কুলছাত্রী মেয়ে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2017, 03:22 AM
Updated : 24 Feb 2017, 04:12 AM

তারা হলেন গোসাইবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজিয়া আফরিন জেমী ও একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর আফসানা মাহজাবীন মাইশা।

ধুনট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর আলম জানান, গত রোববার তাদের ধুনটের সেরা গুরু-শিষ্য মনোনীত করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রেস্ট ও সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামে গেলে এই মা-মেয়ে তাদের ‘নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন’ দেখার গল্প শোনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

শিক্ষক সাজিয়া জানান, নাচ-গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই তার কাজের মাধ্যম। সবার মধ্যে চেতনা সৃষ্টির জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে নেন। এতে তাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা যায় সহজেই।

“তাদের বোঝানো হয়, নতুন পৃথিবীর তারাই মহানায়ক। এই স্বপ্ন তাদের মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়। এটাই আমার কাজ। এ কাজই করে যাচ্ছি।”

শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করেন সাজিয়া। শিশুরা নিজেরা জানে না কিভাবে কোন কাজে অংশ নিতে হয়। তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন সাজিয়া।

তিনি বলেন, “খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্লাসের কার্যক্রম। বই ঠিকমতো পড়া। বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য নানা শিক্ষাও। শিক্ষার্থীদের বইয়ের পাশাপাশি বাইরে থেকেও কিছু শেখার জন্য মনোযোগী হতে অনুপ্রেরণা যোগাই।

“প্রাইভেট পড়ানোর অভ্যাস ছাত্রদের স্কুলবিমুখ করে বলে মনে করি। নিজে প্রাইভেট পড়িনি। আমার শিক্ষার্থীদেরও আমি প্রাইভেটে না যেতে উৎসাহিত করি।”

আর তার সব কাজে সব সময় আগে থাকে তারই মেয়ে মাহজাবীন মাইশা।

মাইশার বক্তব্য, “মার কাছে শিখি। আর শুধু নিজে শিখলে কি হয়? তাই মার মতো অন্যদেরও সহযোগিতা করি। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে গান, কবিতা আবৃত্তি, খেলাধুলা এসব করি।”

উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, বিভিন্ন পরীক্ষার সনদ, চাকরির অভিজ্ঞতা, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের সম্পর্ক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, সৃজনশীলতা - এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করা হয়।

“কোচিং কিম্বা প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের এ প্রতিযোগিতায় না আনার নির্দেশ রয়েছে। এসব যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক সাজিয়া আফরিন জেমীকে এ বছরের সেরা শিক্ষক নির্বাচন করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত একটি কমিটি।”

প্রতিবছর এ রকম একটি কমিটি উপজেলা থেকে একজন সেরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নির্বাচন করে বলে তিনি জানান।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর আলম জানান, জেএসসি ও পিএসসির ফল, অন্যান্য পরীক্ষার ফল, ক্লাসে উপস্থিতি, নিয়ম-শৃঙ্খলা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, সঙ্গীত, ছবি আঁকা - এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়।

“এসব যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নূর আফসানা মাহজাবীন মাইশাকে নির্বাচন করা হয়েছে।”

শিক্ষক সাজিয়া জানান, তাদের বিদ্যালয়টি ১৯১৪ সালে নিম্নমাধ্যমিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ১৯১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত হয়।

বিদ্যালয়টিকে আদর্শ করে গড়ে তুলতে চান তিনি।