গ্রেপ্তার সুজন কুমার মোহান্ত (৩০) পাঁচবিবি পৌরসভার কাদেরপাড়া মহল্লার তারাপদ মোহান্তের ছেলে। তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে মনে করছে তার পরিবার।
পাঁচবিবি থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি পোস্ট করার খবরে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে বুধবার গভীর রাতে তাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে থানায় আনে পুলিশ।”
গত বছর অক্টোবরের শেষ সপ্তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের ৩০ বছর বয়সী রসরাজ দাসের নামে একই অভিযোগ ওঠে। তাকে আটক করা হলেও ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
পাঁচবিবির ওসি আশরাফুল বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলার সব মন্দির প্রাঙ্গণ, গ্রেপ্তারকৃত সুজনের বাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সুজনের নামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে জানিয়ে ওসি বলেন, “এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব এ ঘটনাকে চক্রান্ত বলে মনে করছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লেখাপড়া না জানা এই ছেলে এমন কাজ করেছে বলে মনে হয় না। কোনো দুর্বৃত্ত সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এটা করে থাকতে পারে।”
সুজনের বাবা তারাপদ মোহান্তের দাবি, তার ছেলে এ কাজ করেনি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলে লেখাপড়া তেমন জানে না। সে যে ফেইসবুক ব্যবহার করে তাও আমাদের অজানা। এ অবস্থায় ঘটনাটির জন্য পরিবারসহ এলাকার সাধারণ মানুষ আশঙ্কায় রয়েছে।”
ষাটোর্ধ্ব তারাপদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “যে-ই কাজটি করুক না কেন তা অন্যায় হয়েছে। আমি ধর্মপ্রাণ সকল সম্প্রদায়ের মানুষসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
গ্রেপ্তার সুজন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছ বিক্রেতা রসরাজও অশিক্ষিত। তার ফেইসবুক পেইজে জাহাঙ্গীর আলম তার সাইবার ক্যাফে থেকে ‘অবমাননার’ ছবি পোস্ট করেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রসরাজের মোবাইল ফোন থেকে ‘অবমাননার’ ছবি আপলোড হয়নি। ওই ছবি সম্পাদনা করা হয়েছিল হরিণবেড় বাজারে আল আমিন সাইবার পয়েন্ট অ্যান্ড স্টুডিও থেকে, যার মালিক জাহাঙ্গীর আলম।
এ ঘটনায় আড়াই মাস জেল খাটার পর চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি রসরাজ জামিনে মুক্তি পান।