উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া এলাকায় রেজু খালের মোহনা সংলগ্ন সৈকতে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিতে কক্সবাজারে আসা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নামিয়ে ঢাকা ফেরার পথে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে জানান ওসি।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা বিধ্বস্ত কপ্টারের কাছে ভিড় করে। স্থানীয় জেলেরা এগিয়ে গিয়ে আরোহীদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হেলিকপ্টারটি ঘিরে ফেলেন।
রবিনসন আর ৬৬ মডেলের ওই হেলিকপ্টারে পাইলটসহ মোট পাঁচজন ছিলেন। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল হাসান জানান।
অগোলভির কর্মী মো. শরিফুল ইসলাম, তার দুই ছেলে তানিম (১৯) ও মিয়াদ (১৪) এবং পাইলট শফিকুল ইসলাম এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে এসআই ফারুক জানান।
শরিফুলের শ্যালক মো. নাঈম ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শরিফুল অফিসের কাজের পাশাপাশি দুই ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে বুধবার কক্সবাজার যান।
দুর্ঘটনার পর শরিফুলদের সঙ্গে থাকা তিনটি মোবাইল ফোনই বন্ধ পাচ্ছিলেন বলে জানান নাঈম।
শরিফুলের বাসা যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়ায়। ছেলে তানিম বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী।
উখিয়া থানার ওসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শরিফুল ও তার দুই ছেলে তেমন আহত হননি বলে জানতে পেরেছি। তারা ঢাকায় রওয়ানা দিয়েছেন।”
“সকালে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে সাকিবকে নামিয়ে দিয়ে হেলিকপ্টারের পাইলট অগোভির লোকজন নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিছুক্ষণ পর হেলিকপ্টারটি সৈকতে বিধ্বস্ত হয়।”
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ইনানির ঝাউবাগানের ওপর দিয়ে কয়েকবার চক্কর দিয়ে হেলিকপ্টারটি সৈকতে বিধ্বস্ত হয়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তদন্তকারীরা বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওই দলের প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. জাফর সাংবাদিকদের বলেন, হেলিকপ্টারটির দরজা খোলা থাকায় ভেতরে প্রচণ্ড বেগে বাতাস ঢুকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
মেঘনা এভিয়েশনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের চিফ মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, “পাইলটের অলক্ষে এর যাত্রী শাহ আলম হেলিকপ্টারের দরজা খুলে মোবাইলে ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করছিলেন।
“পাইলট দরজা বন্ধ করতে গিয়ে ফ্লাই-কি ধরে টান দেন। এ সময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারালে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনায় পড়ে।”
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে নানাভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানান তারা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত বলেন, “হেলিকপ্টারটি কক্সবাজারে প্রবেশের সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি বা অবতরণের অনুমতি নেয়নি। দুর্ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু আমি অবগত নই।”
এ বিষয়ে মেঘনা এভিয়েশনের কার্যালয়ে টেলিফোন করা হলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, তারা ফ্যাক্সের মাধ্যমে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।