খরা-পোকা পেরিয়ে এখন দাম নিয়ে হতাশ মাগুরার পাটচাষিরা

খরার সঙ্গে বিছা পোকার আক্রমণে ফলন ভালো না হওয়ার পর এখন দাম নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মাগুরার পাটচাষিরা। 

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2016, 07:59 AM
Updated : 22 August 2016, 08:06 AM

পাটজাত পণ্য ব্যবহার বাড়াতে সরকারের নানা পদক্ষেপ আশা জোগালেও গত বছরের চেয়ে দাম কমে যাওয়ায় পাট বিক্রি করে উৎপাদন মূল্যও উঠে না আসার শঙ্কায় তারা এখন নিরাশ।

এই লোকসানের হাত থেকে চাষিদের রক্ষায় পাটের ন্যূনতম দাম মণ প্রতি তিন হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে জেলা কৃষক সংগ্রাম সমিতি।

তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কর্মকর্তারা কৃষকদের আশঙ্কার বিপরীতে আশা দিচ্ছেন ‘ভালো’ দাম পাওয়ার।  তবে তাতে আশাবাদী হতে পারছেন না চাষিরা।   

চাষিদের একজন শ্রীপুর উপজেলার মর্কদ্দখোলা গ্রামের ওহিদ মোল্লা এ বছর তিন একর জমিতে পাট বুনেছিলেন। ইতোমধ্যে পাট উঠতে শুরু করেছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি একশ আঁটি পাট কেটে মাঠ থেকে নদীতে ফেলতে তার ৬০০ টাকা গুণতে হয়েছে। এর পর জাগ দিয়ে পাট ছাড়িয়ে ধুয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে লেগেছে আরও ছয় থেকে সাতশ টাকা করে।

সব মিলিয়ে একশ আঁটি পাট ঘরে তুলতে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে ১৬০০  টাকা মণ দরে ১০০ আঁটি থেকে  উৎপাদিত ৩০ কেজি পাটের দাম হয় ১২০০ টাকা।

কৃষক ওহিদ মোল্লা বলেন, “পাট কেটে ঘরে তোলার খরচ ও বিক্রি খরচ সমান-সমান। জমি তৈরি, বীজ, সেচ, সার, কীটনাশক ও নিজের পরিশ্রম পুরোটাই ঘাটতি। পাটের বাজার দর তিন হাজার  টাকা না হলে কৃষক বাঁচবে না।”

জমি তৈরির পর থেকে খরচ মেটাতে অনেক কৃষক ধার করেছেন নানা এনজিও থেকে। তা পরিশোধে এখন নতুন করে ঋণ না নেওয়ার বিকল্প দেখছেন না তারা।

হতাশ কৃষক সদর উপজেলার দোরামথনা গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, “মৌসুমের শুরুতে প্রথমে খরায় পাটের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। শেষ সময়ে এসে বিছে পোকায় আক্রমণ হয়।”

রশিদের তিন বিঘা জমি থেকে ৪০ মন পাট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন ২০ মন পাবেন কি না, সন্দেহ তার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, এবার মাগুরায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি জমিতে চাষ হওয়ায় উৎপাদনে কোনো ঘাটতি হবে বলে মনে করছেন না তিনি।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে পার্থ প্রতিম বলেন, “খরা ও শেষ সময়ে কিছু জমিতে বিছা পোকায় আক্রমণ হলেও তা উৎপাদন তেমন বাধাগ্রস্ত করেনি।”

সদরের রামনগর, জোৎশ্রীপুর, কেস্টপুর, মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর, খালিয়া, ও শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী, বাউলিয়া এলাকার একাধিক কৃষক জানান,গত বছর পাটের দাম ভালো থাকায়  তারা এ বছর বেশি জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন উৎপাদন খরচ উঠে না আসার শঙ্কায় তারা।

মাগুরা জেলা  কৃষক সংগ্রাম সমিতি সরেজমিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করে পাটের উৎপাদন খরচ নিরূপণ করেছে  কমপক্ষে ২৫০০ টাকা। তবে বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকায়।

জেলা কৃষক সংগ্রাম সমিতির সভাপতি সুনীল সরকার বলেন, “গত ৫ আগস্ট সমিতির পক্ষ থেকে পাটের ন্যূনতম দাম ৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি আমরা।”

কৃষকদের আশঙ্কার বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম বলেন, “সরকার ৭টি পণ্যে পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলক করেছে।এ কারণে আগামীতে পাটের মূল্য আরও বাড়বে। পাট চাষিরা লাভবানই হবেন।”