টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় একই দলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ পলাতক দশ আসামির নামে হুলিয়া জারি করে সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 17 May 2016, 06:45 PM
আদালতের আদেশের পরও মামলার বিচারে হাজির না হওয়ায় টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম গোলাম কিবরিয়া সোমবার এ আদেশ দেন।
টাঙ্গাইল আদালত পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পলাতক ১০ আসামির মধ্যে নয় জনের মালামাল জব্দের আদেশ টাঙ্গাইল থানায় এবং বাকি আরেকজনের আদেশ কালিহাতী থানায় পাঠানো হবে।
এই ১০ আসামি হলেন- টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা, সাংসদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির হোসেন, দারোয়ান বাবু ওরফে দাঁত ভাঙ্গা বাবু, যুবলীগের তৎকালীন নেতা আলমগীর হোসেন চাঁন, নাসির উদ্দিন নূর, ছানোয়ার হোসেন ও সাবেক কমিশনার মাসুদুর রহমান।
গত ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. আমিনুল ইসলাম অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক এই ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি গোলাম মাহফীজুর রহমানের দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে মোট ১৪ জনকে। আসামির মধ্যে আনিছুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, সমীর মিয়া ও ফরিদ আহমেদ কারাগারে রয়েছেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুককে। হত্যার তিনদিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
পরে নাহার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ফারুক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই তাকে হত্যা করা হয়। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই রানা, মুক্তি, কাঁকন ও বাপ্পা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
রানাদের চাচা শামসুর রহমান খান শাহজাহান আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ভাতিজারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন।
ফারুক হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার খান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আনিসুল ইসলাম রাজা এবং মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রানাদের চার ভাইকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থিতা থেকে সরে যেতে রাজি না হওয়ায় সাংসদ রানার সহযোগী কবির হোসেন পিস্তল দিয়ে ফারুক আহমদকে গুলি করেন। পরে সাংসদের নির্দেশে আনিছুল, মোহাম্মদ আলী, আবদুল হক, সমীর ও কবীর লাশ নিয়ে ফারুকের বাসার সামনে ফেলে রেখে আসেন।
রানা ও মুক্তি এই মামলায় আগাম জামিন নিতে উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন। তখন তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছিল হাই কোর্ট। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে তাতে স্থগিতাদেশ আসে।
কাঁকন ও বাপ্পা ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। রানা ও মুক্তি দেশে থাকলেও তাদের এখনও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।