এ ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে বাগমারা থানার ওসি মতিয়ার রহমান জানান।
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যেই শুক্রবার এই হামলার ঘটনা ঘটল।
স্থানীয়রা বলছেন, মচমইল সৈয়দপুর চকপাড়া আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ওই মসজিদে দুপুর দেড়টার দিকে জুমার নামাজ শুরুর পর দ্বিতীয় রাকাতে এক যুবক পোশাকের নিচ থেকে বোমা বের করে বিস্ফোরণ ঘটান। এর পরপরই জিন্স পরা দুই যুবক মসজিদ থেকে বের হয়ে গেছে।
ওসি মতিয়ার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিস্ফোরণে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
আহতদের মধ্যে ময়েজ উদ্দিন, সায়েব আলী এবং নয়ন নামে ১২ বছর বয়সী এক বালককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনই ওই মসজিদে নামাজ পড়েন। নামাজ পড়তে আসা কয়েকজনের বরাত দিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি এম এম সাইফুল ইসলাম বলেন, মসজিদে ৫০/৬০ জনের মতো নামাজি ছিলেন। তাদের মধ্যে জিন্স পরা দুই যুবক বিস্ফোরণের পর দ্রুত মসজিদ থেকে বেরিয়ে যায়।
নামাজ পড়তে আসা বৃদ্ধ গোলাম উদ্দিন বলেন, বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে খোতবার পর নামাজ শুরু হয়। প্রথম রাকাত শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।
ঘটনার পর রাজশাহী থেকে আসা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতা সেলিম আহমেদ বলেন, তাদের উপর হামলা হতে পারে বলে পুলিশ আগেই সতর্ক করেছিল।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদসহ পুলিশ, র্যাব, সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ রাতে সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিসহ অন্য হামলাকারীদের পরিচয় বের করার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না।
সম্প্রতি রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা এবং দিনাজপুরে মন্দিরে হামলা ও ইতালীয় পাদ্রী হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনায় জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে ঢুকে নামাজরতদের ওপর গুলি চালানো হলে মুয়াজ্জিন নিহত এবং তিনজন আহত হন।
তার একমাস আগে গত ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে বোমা হামলায় দুইজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন।
এরপর ১০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার দারুস সালামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাণী ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই নামে একজন নিহত হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহত ওই যুবক ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান।
মাহফুজের আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ ছিল এবং তিনি হোসাইনী দালানে বোমা হামলায় ‘সরাসরি’ অংশ নিয়েছিলেন বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তবে কারা ওই হামলা চালিয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে উগ্রপন্থি হামলার শিকার হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এরকম বহু হামলার ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। ২০১৩ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও আহমদিয়াদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি তোলে।