বগুড়ায় শিয়া মসজিদে নামাজে গুলি, মুয়াজ্জিন নিহত

বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিপুরে শিয়া মুসলিমদের একটি মসজিদে নামাজরতদের উপর দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে একজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন।  

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 02:06 PM
Updated : 26 Nov 2015, 05:15 PM

আল মস্তেফা মসজিদে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের সময় এ হামলা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, মুসল্লিরা যখন সিজদায়, তখন তিন যুবক গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।

হামলাকারী কারা, তা পুলিশ কিংবা স্থানীয়দের কেউ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে পারেনি। স্থানীয়রা বলছেন, ওই এলাকায় শিয়াদের সঙ্গে সুন্নিদের কোনো ধরনের বিরোধ ছিল না।

পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে ইমাম বাড়ায় শিয়া সমাবেশে হামলার ৩৪ দিনের মাথায় বগুড়া জেলায় একই সম্প্রদায়ের উপর হামলা হল।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে দাবি উঠলেও সরকার বলছে, এই দলটির তৎপরতা বাংলাদেশে নেই।

বুধবার ঢাকায় ডিবির সঙ্গে গোলাগুলিতে একজন নিহতের পর অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ দাবি করে, এরাই হোসাইনী দালানে হামলা চালিয়েছিল, যাতে দুজন নিহত হয়। 

হোসাইনী দালানে ‘হামলাকারীদের’ গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টা না গড়াতেই উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়ার শিবগঞ্জে আক্রান্ত হল শিয়ারা।

হামলার পর গণভবনে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মের নামে হামলাকারীদের ‘উন্মাদ’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, যারা মসজিদে হামলা চালায়, তারা ‘সাচ্চা মুসলিম’ নয়।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুলিতে একজন মারা যান এবং তিনজন আহত হন।”

হামলায় নিহত মোয়াজ্জিনের নাম মোয়াজ্জেম হোসেন (৭০। ইমাম শাহিনুর রহমান (৬০) ছাড়া আহত অন্যরা হলেন তাহের মিস্ত্রি (৫০) ও আফতাব আলী (৪০)।

মোয়াজ্জেমকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসান পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এস এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, গুলিবিদ্ধ এই ব্যক্তি মারা গেছেন।

হামলায় আহতরা

শাহিনুর ও তাহের মিস্ত্রি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা আশঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আফতাব শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।

হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকটি গুলির খোসা পায় বলে শিবগঞ্জ থানার ওসি আহসান হাবিব জানিয়েছেন।  

বগুড়া থেকে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানও ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, “এটা দুর্বৃত্তদের হামলা। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

“দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না।”

‘হামলাকারী তিনজন’

শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলাকারীও তিনজন ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে।

এর আগে ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যা এবং আশুলিয়ায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলায়ও তিনজন ছিলেন।

ওই তিনটি ক্ষেত্রে হামলাকারীরা মোটর সাইকেলে এলেও শিবগঞ্জে শিয়াদের মসজিদে হামলাকারীরা এসেছিল হেঁটে। তবে সব ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনজন যুবক কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে প্রাচীর টপকিয়ে পালিয়ে যায়।”

এদের মধ্যে একজন টুপি-পাঞ্জাবি পরা এবং অন্য দুজন চেক শার্ট প্যান্ট পরা ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

সবাই যখন সিজদায়, গুলি ‘তখনই’

মাগরিবের নামাজরতদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয় বলে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

নিহত মোয়াজ্জেমের চাচা উকিল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “যখন সবাই মাগরিবের নামাজের সেজদায় ছিল, তখনই হঠাৎ গুলি হয়।”

গত মাসে পুরান ঢাকায় শিয়াদের ইমাম বাড়ায় বোমা হামলার পর সম্প্রতি শিবগঞ্জের শিয়ারাও হুমকি পাচ্ছিলেন বলে ওই এলাকার বাসিন্দা মোজাফ্ফর হোসেন জানান।

তিনি বলেন, প্রায় ৩০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করছিল। তখনই জানালা দিয়ে গুলিবর্ষণ হয়।

উকিল মিয়া বলেন, “হঠাৎ নির্বিচারে গুলি করার ঘটনায় আমরা হতবাক হয়ে গেছি। এখানে শিয়া-সুন্নির কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। কখনই কারও সঙ্গে মসজিদ নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না।”