সাকার আপিল: রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 04:04 PM
Updated : 1 July 2015, 04:04 PM

রোববার থেকে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করার কথা রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্ব চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার দশম দিনের মতো আপিলের শুনানি নেন।

এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

শুনানি শেষে মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যে চারটি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেসব অভিযোগে সেই দণ্ড যেন বহাল থাকে সেজন্য আদালতে আর্জি জানিয়েছি। এটা বহাল থাকা ন্যায়। ন্যায় বিচারের স্বার্থেই এটি অতিপ্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকবাহিনী ও তার নিজস্ব বাহিনীকে নিয়ে সেসময় রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় কী তাণ্ডব করেছিল তা আমাদের বক্তব্যে বলেছি।একইদিনে চারটি জায়গায় হামলা করে বহুলোককে হত্যা করেছিল, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছিল। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ করেছে। আর এই আক্রমণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে এই দেশ ছাড়া করা। এই অভিযোগ বিস্তারিত তুলে ধরেছি আদালতের সামনে।”

শুনানি বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, “আমি আদালতে বলেছি, চারটি চার্জে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। আসলে তিনি সাতটি চার্জে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযুক্ত।

“তার বিরুদ্ধে ওই চারটি অভিযোগই হিংস্র ও গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ। সুতরাং এ ধরনের অপরাধ করে নানা অজুহাতে কেউ যেন পার পেয়ে না যায়। তাহলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে না, সমাজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রচণ্ড আস্থাহীনতায় পড়বে।”

মাহবুবে আলম বলেন, “উনি (সালাউদ্দিন কাদের) বলেছেন, উনি পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন; আফগানিস্তান, বুলগেরিয়ো , তুরস্ক হয়ে জামার্ন পার হয়ে ইংল্যান্ডে গেছেন। আমরা বলেছি, এতগুলো দেশ পার হতে হলে তো পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়া যায় না। পাসপোর্ট বা এ সংক্রান্ত কোনো কাগজই তিনি দাখিল করেননি। এমনকি কেন দাখিল করেননি তার ব্যাখ্যাও দেননি।

“পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে বা পরীক্ষা দিলে সেখানে রেকর্ড থাকে। কিন্তু সেখান থেকেও কোনো কিছু আনা হয়নি। কাজেই আমরা বলেছি, উনি দেশেই ছিলেন না বলে যে অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন সেটি ভিত্তিহীন। বরং বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র ও খবরের কাগজে প্রকাশ পেয়েছে সেসময় তিনি এখানে ছিলেন এবং নানা ধরনের কর্মকাণ্ড এখানে চালিয়েছেন।”

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, রোববার থেকে আপিলের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন তারা।

দেড় বছর আগে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৬ জুন থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের শুনানি শুরু হয়। এটি আপিল আদালতে আসা যুদ্ধাপরাধের পঞ্চম মামলা।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর আগে শুনানিতে আসামিপক্ষ পেপারবুক থেকে এসব অভিযোগ ও এরপক্ষে প্রসিকিউশনের সাক্ষীর জেরা-জবানবন্দি, আসামিপক্ষের সাক্ষী ও ট্রাইব্যুনালের রায় তুলে ধরে।

রাষ্ট্রপক্ষ ৩০ জুন থেকে লিখিত যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে, যা বুধবার পর্যন্ত চলে।

রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

এছাড়া হত্যা, গণহত্যার পরিকল্পনা সহযোগিতা এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো তিনটি অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপহরণ ও নির্যাতনের দুটি ঘটনায় তাকে দেওয়া হয় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড।

রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ এনেছে, তার মধ্যে নয়টি (২ থেকে ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। আর প্রসিকিউশন শুনানির সময় কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগের মূল্যায়ন করেনি ট্রাইব্যুনাল।

সব দণ্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের।