সাকার আপিল : রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 05:50 PM
Updated : 30 June 2015, 05:50 PM

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্ব চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ নবম দিনের মতো আপিলের শুনানি নেন। বুধবারও শুনানি চলবে।

এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা শুনানি শুরু করেছি। ২,৩ ও ৪ নম্বর চার্জের পক্ষে যুক্তিগুলো পড়ে শুনিয়েছি।”

এ দিন শুরুতে পেপারবুক থেকে আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায় উপস্থাপন করে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ লিখিত যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে।

আদালতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

একরামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামিপক্ষ পেপারবুক থেকে ট্রাইব্যুনালের রায় পড়া শেষে প্রস্তুতির জন্য সময় প্রার্থনা করে।আদালত তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে বলে।

“এরপর আসামিপক্ষ অন্তত রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে শুনানি শুরু করতে বললে রাষ্ট্রপক্ষ শুরু করে।”   

মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “দুঃখজনক হলেও যুদ্ধাপরাধের প্রতিটি মামলাতে দেখা যাচ্ছে, এগুলো বিলম্বিত করার একটা প্রচেষ্টা।..আটদিন যাবত পড়া হচ্ছে, সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি, এটা আমার কাছে খুব একটা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয় না।”

দেড় বছর আগে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ জুন থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের শুনানি শুরু হয়। এটি আপিল আদালতে আসা যুদ্ধাপরাধের পঞ্চম মামলা।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সালাউদ্দিন কাদেরকে নয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

‘দ্বিতীয় অভিযোগে আপিল করা উচিত ছিল’

শুনানির পর মাহবুবে আলম নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় অভিযোগে প্রসিকিউশনের আপিল করা উচিত ছিল।

এই অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সালাউদ্দিন কাদেরকে। এখানেও মৃত্যুদণ্ড চাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

মঙ্গলবার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ এই তিনটি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন মাহবুবে আলম। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে তৃতীয় অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং দ্বিতীয়টির মতো চতুর্থ অভিযোগেও ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ অনুসারে, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে রাউজানের মধ্যগহিরা হিন্দুপাড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামটি ঘিরে ফেলে। পরে ডা. মাখনলাল শর্মার বাড়ির আঙিনায় নিরস্ত্র হিন্দুদের একত্রিত করে সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের নির্বিচারে গুলি করে। এ ঘটনায় পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, জ্যেতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাউজানের গহিরা এলাকায় কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতে প্রার্থনারত অবস্থা থেকে নূতন চন্দ্রকে টেনে বাইরে নিয়ে আসা হয়। সালাউদ্দিন কাদেরের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনারা নূতন চন্দ্রের ওপর গুলি চালানোর পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাকে গুলি করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

চতুর্থ অভিযোগ হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ রাউজানের জগৎমল্লপাড়ায় যান সালাউদ্দিন কাদের। ওই দিন সকালবেলায় সালাউদ্দিনের অন্য দুই সহযোগীকে ওই গ্রামে পাঠিয়ে একটি মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য বলা হয় গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। পরে গ্রামটি ঘিরে ফেলে কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙিনায় জমায়েত হওয়া হিন্দুদের ওপর নির্বচারে গুলি চালানো হলে তেজেন্দ্র লাল নন্দী, সমীর কান্তি চৌধুরী, অশোক চৌধুরীসহ ৩২ জন নিহত হন। এছাড়া অমলেন্দ্র বিকাশ চৌধুরী, জ্যোৎস্না বালা চৌধুরী ও ছবি রাণী দাস গুরুতর আহত হন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এই দিনে (১৩ এপ্রিল, ১৯৭১) একটার পর একটা জনপদে পাকবাহিনী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাদের সাথে ছিলেন।এরকম ভাবে কোনো জায়গায় ৩০-৪০ জনকে হত্যা করেছে, কোনো জায়গায় পাঁচ জনকে হত্যা করেছে, কোনো জায়গায় একজনকে হত্যা করেছে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো তারা ঘটিয়েছে।

“এইগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রথম যেটা করেছে মধ্য গহিরা গ্রামে, সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল, শান্তি কমিটির মিটিং হবে। তারপর সবাইকে এনে পুকুর পাড়ে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।”