প্রেস ক্লাবে ‘ভাগাভাগির’ কমিটি চায় না বিএনপি

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভায় ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে যে ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়েছে তাদের প্রতি বিএনপির সমর্থন নেই বলে দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 08:45 PM
Updated : 2 June 2015, 08:53 PM

মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি নির্বাচিত কমিটির বিপরীতে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়েছে। এখানে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় ও টকশোতে যেসব আলোচনা হচ্ছে- সেখানে বলা হচ্ছে ওই কমিটিতে আওয়ামী লীগের লোকজন আছেন, বিএনপির কিছু লোকজন আছেন। এভাবে একটি কমিটি হয়েছে। বিএনপি জাতীয় প্রেস ক্লাবকে জাতীয়তাবাদী প্রেস ক্লাব বানাতে চায়নি। আমরা এই প্রতিষ্ঠানটিকে আওয়ামী প্রেসক্লাব বা বাকশালী প্রেসক্লাব হিসেবেও দেখতে চাই না।

“আমরা ভাগাভাগির রাজনীতি করি না। ভাগাভাগির রাজনীতি আমরা বিশ্বাসও করি না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রে কারা আসবেন, কারা যাবেন, এটা গণতান্ত্রিকভাবে ফয়সালা হবে।”

গত ২৮ মে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ফোরাম ও জাতীয়তাবাদী সমর্থিত একটি অংশের সমন্বয়ে ‘সমঝোতা’র একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে সভাপতি এবং বিএনপির সমর্থক সাংবাদিক নেতা কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

ওই সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতারা অনুপস্থিত ছিলেন।

নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ফোরাম থেকে ওই কমিটিতে স্থান পাওয়া ৮ সাংবাদিককে বহিষ্কার করা হয়।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ ব্রিফিং হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব নিয়ে গণমাধ্যমে নানা বক্তব্য আসার পর এই প্রথম বিএপির পক্ষ থেকে সংবাদ ব্রিফিং করে দলের অবস্থান জানানো হল।

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচিত কমিটি ছিল। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম ওই কমিটির বিপরীতে একটা ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষিত হল। সেই কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান, যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তরফ থেকে চাঁদপুরে বোধহয় বার দুইয়েক নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন।

“একজন পরাজিত সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী, আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে জাতীয় প্রেস ক্লাবেরর সভাপতি পদে আসীন করে দিয়ে বা এই প্রক্রিয়াটাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে সরকার যে সিগন্যালটা দিলেন সেটা হচ্ছে- তারা জলাতংক রোগের মত ভোটাতংকে ভুগছেন। যখনই ভোট আসে, আওয়ামী লীগের মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করে।

“পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানে বিএনপির লোক কজন থাকল, আওয়ামী লীগের কজন থাকল- এ ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে দেখতেও চাই না।

“এ ব্যাপারে আমাদের দলের তরফ থেকে আমাদের অবস্থানটা জানাতে চাই, আমরা ভাগাভাগির রাজনীতি করি না। সরকার ভাগাভাগির রাজনীতি পছন্দ করে। যেমন সংসদকে ভাগাভাগি করে এরশাদকে ৪০টি আসন দিয়েছেন, অন্য শরিকদের দুই-একটি দিয়েছেন। ভাগাভাগি সংসদের মতো আমরা ভাগাভাগি জাতীয় প্রেস ক্লাব, ভাগাভাগি এফবিসিসিআই, ভাগাভাগি শিক্ষক সমিতি- এই ভাগাভাগির রাজনীতি আমরা করি না। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সেটা জাতীয় সংসদের জন্য, জাতীয় প্রেস ক্লাবের জন্য, আইনজীবী সমিতির জন্য প্রযোজ্য হবে।”

নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়াদের মধ্যে বিএনপি সমর্থক কাউকে চেনেন কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “তাদের সঙ্গে আমার কোনো ওয়ার্কিং রিলেশন ছিল না। তাদের অনেককে আমি চিনি, জানাশুনা আছে।

“তবে তারা বিএনপির লোক আমি জানি না। এ জাতীয় পেশাদারি প্রতিষ্ঠানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে পরিচয়ে আমরা কাউকে দেখতে পছন্দ করি না।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, তকদির হোসেন মো. জসিম, এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।