আইন কমিশনের প্রস্তাবের পর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রোববার এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের অবস্থান প্রকাশ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আলোচনা অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “এই সংসদের কোনো বৈধ্তা নেই। এরকম একটি সংসদে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ যা বাতিল করা হয়েছিল, তা আবার সরকার ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা (সরকার) বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা হাতে নিয়ে আসতে যাচ্ছে।”
একই স্থানে আরেকটি আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনা সরকারকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় রাখা।”
আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের ওপর আওয়ামী লীগ প্রভাব খাটাচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে। এই নিয়ে মন্তব্যের জন্য আদালতে গয়েশ্বরকে তলবও করা হয়েছিল।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
‘আন্দোলনে বিজয় আসবে’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর আন্দোলনে বিএনপির বিজয় আসবে বলে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করেছেন মির্জা ফখরুল।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ওই আলোচনায় তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া একজন আপসহীন নেত্রী। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন। ১/১১ সরকারের সময়ে বন্দি অবস্থায় থেকে আন্দোলন করেছেন।
আওয়ামী লীগে জোর করে ক্ষমতায় আছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর তিন মাসে তারা ৩১০ জন গণতন্ত্রকামী তরুণকে হত্যা করেছে। গুম করা হয়েছে অনেককে।”
বিএনপির বক্তব্যের সপক্ষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “এসব বক্তব্যের পরও সরকারের বোধোদয় হচ্ছে না।”
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, ফজলুর রহমান, সাদেক আহমেদ খান, আবুল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
‘সাংবাদিকরা এত বোঝেন!’
বিএনপির নবগঠিত ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন গয়েশ্বর।
প্রেসক্লাবে জিয়া পরিষদের ওই আলোচনা সভায় বলেন, “অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর মহানগরের নতুন আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে।আজ দেখেছি, বিভিন্ন মিডিয়াতে ওই কমিটির বিরুদ্ধে উল্টো রিপোর্ট।
“সব কিছুতেই সাংবাদিকরা এত বেশি বোঝেন! রাজনৈতিক জীবনে অনেক সরকার দেখেছি; আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সামরিক, জরুরি, বাকশাল, স্বৈরাচারের সরকার। এখন সাংবাদিকদের দিয়ে একটি সরকার যদি বেঁচে থাকা অবস্থায় দেখে যেতে পারতাম, ভালো হতো।”
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “দেশে এখন এক ব্যক্তির ইচ্ছার শাসন চলছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, জনগণের একটি ভোটও তাদের কপালে জুটবে না। সেজন্য নেড়ি কুকুরের মতো তারা (মন্ত্রীরা) ঘেউ ঘেউ করছে।”
এই সরকারকে হটাতে না পারলে দেশের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটবে না দাবি করে ঈদের পরে আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান গয়েশ্বর।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবির মুরাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক খায়রুল কবীর খোকন, জিয়া পরিষদের এমতাজ হোসেন, মাহফুজুর রহমান ফরহাদ বক্তব্য রাখেন।