‘স্থিতিশীল বাংলাদেশের জন্য সমঝোতা চাই’

অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতার বিকল্প নেই বলে অভিমত দিয়েছেন একটি আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তাদের অধিকাংশই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2014, 03:27 PM
Updated : 25 Jan 2014, 06:37 PM

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ৫ জানুয়ারি পর’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় একদল রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, নারীনেত্রী, কূটনৈতিক, সাংবাদিক ও বিশ্লেষক উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন ছাড়া স্থিতিশীলতা আসবে না।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিএনপি প্রতিনিধি ছাড়া প্রায় সব আলোচক জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানান।

সবাই একবাক্যে বলেন, রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে হবে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত সংগঠনটিকে।

নির্বাচনের বাইরে থাকলেও দেশকে স্থিতিশীল রাখতে বিএনপিরও সহযোগিতা চান আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ।

তোফায়েল আহমেদ

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামী দিনে দেশের অগ্রগতির জন্যে সরকার কাজ করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। থাকবে বিনিয়োগের পরিবেশ, স্থিতিশীলতাও থাকবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে বলে জানান সরকারের এ নীতিনির্ধারক।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থউপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রাজনৈতিক সমঝোতা কীভাবে হবে তা খুঁজে বের করার তাগিদ দেন।
 

ভোটের পর সাময়িক স্থিতিশীলতা এলেও দীর্ঘমেয়াদে তা বজায় থাকবে এমন নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করেন তিনি।

“সমঝোতা হতেই হবে। বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে দৃশ্যমান কিছু করতে হবে। তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা করেই ঐকমত্য তৈরি হতে হবে।”

সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, “এখন দরকার বিনিয়োগের পরিবেশ। চার পঞ্চমাংশ বিনিয়োগ আসে বেসরকারিখাত থেকে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা কতদিনের মধ্যে করবে তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা না থাকার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ টি এম শামসুল হুদা

সলিমুল্লাহ খান

তিনি বলেন, “স্থিতিশীলতা আসবে তখনই যখন সঠিক নির্বাচন হবে, সংসদ হবে জনপ্রতিনিধিত্বশীল। এজন্যে বিএনপির দরকার পড়বে না।”

প্রতিটি আন্দোলনে সহিংসতা থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবারও সহিংসতা ছিল। তবে তার চেয়ে বেশি ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। যা সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

“রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নিপীড়ন, গ্রেফতার বন্ধ হলে সহিংসতাও থাকবে না।”

সরকার অবৈধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আলোচনা তো করতেই হবে।”

‘নিরপেক্ষা নির্বাচন’ আয়োজনের তাগিদ দিয়ে আমির খসরু বলেন, “সমঝোতা হবে আলোচনার মাধ্যমে। সব দলকে নিয়ে আলোচনা হতে হবে। এজন্যে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।”

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, “দেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এখনো ইলেক্টোরাল ডেমোক্রেসির মধ্যে রয়েছে। এর বাইরে অনেক কাজ রয়েছে “

সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত থাকায় সরাসরি রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য না করলেও সাবেক সিইসি বলেন,“সুসংসহত গণতন্ত্রের জন্য শর্ট টার্ম ও লংটার্ম কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো শর্ট টার্মেই লাভবান হতে চায়। দীর্ঘমেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন হলে রাজনৈতিক দলগুলোরই বড় লাভ হবে।”
 

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সমঝোতা হবে এমন প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কিছু সম্ভব নয়। বড় দুই দলের সমঝোতার ওপরই তা নির্ভর করে।”

গণতন্ত্র ও অর্থনীতির জন্যে ভোটের পর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় শক্তিশালীর পাশাপাশি মানবাধিকার, সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেন তিনি।

সাবেক কূটনীতিক নাসিম ফেরদৌস বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “অন্তত ২০-৫০ বছরের কথা ভাবেন বিনিয়োগকারীরা। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে হবে। অনুকূল পরিবেশ পেলে বিনিয়োগকারীরা ফিরবে দেশে “

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে সমঝোতার আহ্বান জানান।

জামায়াতের বিষয়ে ‘হার্ডলাইনে’ যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

সেলিম মনে করেন, “এখন সামনে দুইটি পথ। হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ, সফটলাইনে বিএনপি। সরকার যদি হার্ডলাইনে যাওয়া অব্যাহত রাখে তাবে দেশের সর্বনাশ হবে।
 

খুশি কবির

আয়েশা খানম

“জামায়াতকে অবশ্যই পলিটিক্যাল সিন থেকে সরিয়ে দিতে হবে। হার্ডলাইনের এগেইনস্টে থাকবে জামায়াত। বিএনপি-আওয়ামী লীগকে সমঝোতা করেই এগোতে হবে।”

একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে যা করার তা আওয়ামী লীগ করবে “

এতে জনগণের সমর্থন থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলে ধরে দলটির সঙ্গ ছাড়তে পরামর্শ দেন বিএনপিকে।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “সাধারণ জনগণ মনে করে-বিএনপি হচ্ছে জামায়াত স্পন্সরড, জামায়াত গাইডেড একটি শক্তি।”

পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে আরো রাজনীতি চর্চা করার আহ্বান জানান তিনি।

বেসরকাররি সংস্থা নিজেরা করি’র প্রধান খুশী কবির বলেন, “৫ জানুয়ারির ভোটকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা, নৈরাজ্য ও নির্যাতন চলেছে তা দেশের জন্য খুবই লজ্জাকর।”

জামায়াতকে ছাড়ার বিষয় বিএনপিকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এখন বিএনপিকে রিথিংকিং করতে হবে। জনগণের কথা ভেবে, মানুষের কথা ভেবে রাজনীতি করতে হবে। জনগণের প্রতি সহিংসতা যারা করে তাদের ছাড়তে হবে।”

মোজাম্মেল বাবু

নাসিম ফেরদৌস

রাজনীতি বিশ্লেষক সলিমুল্লাহ খান বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করার জন্যই জামায়াত সহিংসতা চালিয়েছে। বিএনপি এতে উৎসাহ যুগিয়েছে।

“এ সহিংসতার জন্যে ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হতে হবে।”

তিনি বলেন,“নির্বাচনকে কেন্দ্র এবার সহিংসতা হয়েছে। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মাত্রা বাড়িয়েছে। এখন ভোটের আগে শুধু নির্বাচন নিয়ে একটি পদ্ধতি চালু করা যায় কি না, ভাবতে হবে।”

জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে জোট করলে তাদেরও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। ঘটনাবহুল দশম সংসদ নির্বাচনের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী আলোচনা সঞ্চালনা করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনাটি সরাসরি ওয়েবকাস্ট করা হয়। সরাসরি সম্প্রচার করা হয় একাত্তর টেলিভিশনেও।