সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময়: খালেদা

সংলাপের প্রস্তাবকে ‘নাটক’ আখ্যায়িত করে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2013, 05:19 AM
Updated : 4 May 2013, 11:37 AM

সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব উত্থাপনের দুদিন এবং তাতে সাড়া দিতে আহ্বানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শনিবার মতিঝিলে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে বিরোধী দলের অবস্থান জানান তিনি।

দাবি পূরণ না হলে টানা অবস্থান কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

নেতা-কর্মীদের নিয়ে উদ্দেশে  তিনি বলেন, “আমি বসতে বললে আপনারা বসে থাকবেন তো?”

বিশাল সমাবেশ হাত তুলে সমর্থন জানালে খালেদা জিয়া বলেন, “যেহেতু কাল (রোববার) হেফাজতে ইসলামের ঘোষিত একটি কর্মসূচি আছে। আমি বলার পর আপনারা (উপস্থিত জনগণ) রাজি থাকা সত্ত্বেও সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি।

“এই সময়ের মধ্যে চিন্তা করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিন। তা না হলে এরপর আমরা এমন কর্মসূচি দেবো- হয় বিদায় নেবেন, না হয় পালাবার পথ পাবেন না।”

সরকারের উদ্দেশে বিরোধী নেতা আরো বলেন, “যদি ৪৮ ঘণ্টা পর আপনারা কোনো ধানাই-পানাই করে বলেন, সমাবেশের জন্য জায়গা দেয়া যাবে না।

“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তখন অনুমতির চিন্তা করবো না। এই সরকারকে অনেক সময় আমরা দেয়েছি। অনেক জানমাল, গণহত্যা হয়েছে। আর নয়।”

আগামী নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বিএনপি আসবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশা করা হলেও তাতে নেতিবাচক এই সাড়া এলো।

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি তারা মানবেন না। আলোচনা হতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে।

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংলাপে বসতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আহ্বান জানান। পরদিন তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন বহুদলীয় সরকারও গঠন করা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান জানানোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু আগে নির্দলীয় পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তারা খালেদা জিয়ার মুখ থেকেই প্রতিক্রিয়া শুনতে চান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “সাভার ট্র্যাজেডিতে যখন সারাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে, তখন মানুষজনকে শান্ত করতে আরেক ডায়ালগ নাটক শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

“আলেম-উলামাদের অবরোধ ও আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি বানচাল করে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিতেই আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এই সংলাপ নাটক করছেন।”

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে- প্রধানমন্ত্রীকে সেই ঘোষণা দিয়ে তারপর সংলাপে ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা।

তবে তার এই সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগেই শেখ হাসিনা বলেছেন, অনির্বাচিত সরকার আর ফিরবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আগে পরিবেশ (সংলাপের) তৈরি করুন। নির্দলীয় সরকার কী রূপ হবে , সে বিষয়ে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি। সাহস থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কী হয়- আপনি দেখুন।”

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের সময় সভামঞ্চে দলীয় নেতাদের সঙ্গে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহম্মেদ, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান, ইসলামী ঐক্য  জোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামীসহ ১৮ দলের শীর্ষ নেতারা।

দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে যোগ দেন খালেদা। তিনি মঞ্চে উঠলে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়।

বিকাল পৌনে ৫টায় শুরু করে এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দলীয়করণের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনি ক্ষমতায় আসে, তখনি দেশের অবস্থা খারাপ হয়।”

নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীকে সরকারের ‘লোকজন’ গুম করেছে অভিযোগ করে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান বিরোধী নেতা।

ভারতের সঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষায় দাবিতে দেশবাসীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে এই সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক। তাকে সহযোগিতা করেন দলের মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও জামায়াতের মহানগর সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু, মজিবুর রহমান সরোয়ার,ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, গোলাম আকবর খন্দকার, হারুন অর রশীদ, আসাদুল হাবিব দুলু, খায়রুল কবির খোকন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাইফুল আলম নিরব,শিরিন সুলতানা, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।

শাপলা চত্বরে পশ্চিমমুখী করে নির্মিত হয় সমাবেশ মঞ্চ। দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পুরানা পল্টন পর্যন্ত ছড়ানো ছিলো জনসমাগম। রাউজক এভিনিউ, ফকিরাপুল, আরামবাগসহ হাটখোলা মোড় এলাকায়ও অবস্থান নেন কর্মী-সমর্থকরা।

মঞ্চের সামনে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা নিরাপত্তা বেষ্টনির উত্তর পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল এবং পশ্চিম দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রঙিন হলুদ-সবুজের গেঞ্জি ও লাল টুপি পরে অবস্থান নেন।

দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, রাজউক এভিনিউ মোড়ে বড় পর্দা বসানো হয়, যেখান থেকে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেখা ও শোনা যায়।

এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিলো জোরদার। সভাস্থলের আশে-পাশের উঁচু ভবনে পুলিশের পাহারা ছিলো। মঞ্চের চারপাশে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাও বসায় পুলিশ।