Published : 06 Apr 2013, 11:42 AM
শনিবার বিকালে ধাওয়ার পর রমনা পার্ক দিয়ে পালানোর সময় মিন্টো রোডে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটায় হেফাজতকর্মীরা।
‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তি দাবিতে লংমার্চের পর শনিবার মতিঝিলে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলামী।
বিএনপির সমর্থন পাওয়া ওই সমাবেশে বক্তারা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে বক্তব্যও দেন।
সমাবেশ শেষে বিকাল সোয়া ৫টচার দিকে একদল হেফাজতকর্মী জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকে, তখন গণজাগরণ মঞ্চে পূর্বঘোষিত সমাবেশের প্রস্তুতি চলছিল।
হেফাজতকর্মীদের আসার খবর শুনে গণজাগরণ মঞ্চে উত্তেজনা দেখা দেয়। এবং একদল কর্মী পূর্ব দিকে এগোতে থাকে।
মঞ্চে তখন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মাইকে বক্তব্যে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাতে থাকেন।
লাঠি হাতে থাকা হেফাজতকর্মীরা ইট ছুড়তে শুরু করলে খালি হাতে এগিয়ে যাওয়া গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা প্রথমে পিছু হটে। এই সুযোগে হেফাজতকর্মীরা ঢাকা ক্লাব পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
শাহবাগে হেফাজতকর্মীরা এগিয়ে আসছে- এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে তখন শিক্ষার্থীরা ছুটে আসতে থাকে।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা তখন শাহবাগের ফুলের দোকানসহ আশপাশ থেকে লাঠি-সোঁটা নিয়ে এগিয়ে আসে। এগিয়ে আসে সেখানে থাকা পুলিশও।
হেফাজতকর্মীরা ইট ছুড়তে থাকলে পুলিশও পাল্টা কাঁদোনে গ্যাস ছোড়ে। এই পর্যায়ে হেফাজতকর্মীদের ধাওয়া করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা।
ধাওয়ার মুখে হেফাজতকর্মীরা শিশু পার্কের বিপরীতে রমনা পার্কের অস্তাচল ফটকে পৌঁছে দুই ভাগ হয়ে যায়। একভাগ রমনা পার্কের ভেতরে ঢোকে, অন্যভাগ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের হয়ে মৎস্য ভবনের দিকে চলে যেতে থাকে।
মতিঝিলে সমাবেশ শেষে শনিবার বিকালে রমনা পার্কের দেয়াল টপকে শাহবাগে যাওয়ার চেষ্টা চালায় একদল হেফাজতকর্মী।
ওই সময় এক তরুণ হেফাজতকর্মীদের মারধরের শিকার হন। ওই তরুণ সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি একটি দোকানের কর্মচারী।
একই সময় পাঞ্জাবি ও টুপি পরা পঞ্চাষোর্ধ্ব দুই ব্যক্তিকে মারধর করে পুলিশে তুলে দেয় শাহবাগের আন্দোলনকারীরা।
ধাওয়ার মুখে রমনা পার্ক থেকে হেফাজতকর্মীরা রূপসী বাংলা হোটেল সংলগ্ন ফটক দিয়ে বেরিয়ে যায়, তখন সেখানে অন্তত পাঁচটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
পরে হেফাজতকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওই দিক থেকে পুনরায় এগোতে চাইলে রূপসী বাংলা হোটেল থেকে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
৬টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর হেফাজতকর্মীরা ওই স্থান ছেড়ে যায়।
সোয়া ৬টার দিকে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও রমনার অস্তাচল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শাহবাগ আন্দোলনকারীদের পার্ক থেকে বের করে ফটক বন্ধ করে দেয়।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে পড়া হেফাজতকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ধাওয়ার মুখে পড়ে পালিয়ে যায়।
রমনা পার্ক থেকে মোট নয়জনকে হেফাজতকর্মী সন্দেহে ধরে পুলিশে দেয়া হয়। এর মধ্যে গেঞ্জি-প্যান্ট পরা ১৫-১৬ বছরের দুই কিশোরের পকেটে কলা ও বিস্কুট পাওয়া গেছে। তবে তারা হেফাজতকর্মী নন বলে দাবি করেছেন।
হাতে পানির বোতল নিয়ে শাহবাগে আসা দুজনকেও পুলিশে দেয়া হয়। সাংবাদিকরা পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা নিশ্চুপ ছিলেন।
পার্কে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পুরো সময় শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়কে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের কয়েকদফা মিছিল হয়। মিছিল হয় শাহবাগ থেকে রূপসী বাংলা হোটেল পর্যন্ত।
হেফাজতের মিছিল এগিয়ে এলে প্রতিরোধ গড়ে গণজাগরণ মঞ্চ।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত নিষিদ্ধের আন্দোলনে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ অভিহিত করে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি।
হেফাজতের লংমার্চ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ছিল গণজাগরণ মঞ্চের।
কর্মসূচির সমর্থনে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম।
দুপুরে ইমরানের নেতৃত্বে মিছিল হয় শাহবাগে। বিকাল সাড়ে ৩টার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল আসতে শুরু করে শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে।
নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিলসহ আন্দোলনের কর্মীরাও ফিরে আসে। ওই সময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একটি মিছিল আসে শাহবাগে।
এর মধ্যে আন্দোলনের নারীদের অংশগ্রহণে জাতীয় পতাকা নিয়ে একটি মিছিল শাহবাগ, জাদুঘর সামনের এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
মিছিলকারীদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরে চলতে থাকে স্লোগান ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
হেফাজতের সমাবেশ থেকে ‘নাস্তিক’ বলার প্রতিবাদে সমাবেশ মঞ্চে কুরআন তেলাওয়াতও করেন এক নারী।
মিরপুরের বাসিন্দা লুবনা হোসেন কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি নিজের কবিতাও পাঠ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যে কুরআন শরিফ পড়ি, এটা তারা দেখে না বলে তারা আমাদেরকে নাস্তিক বলে।”
লুবনা বলেন, যার যার ধর্ম নিয়ে যে কেউ গণজাগরণ মঞ্চে আসতে পারেন।
পরে প্রজন্ম চত্বর থেকে মঞ্চের সংগঠক আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, “আমাদের বোন লুবনা হোসেন শাহবাগের বিরুদ্ধে নাস্তিক্যের অপপ্রচার ঠেকাতে মঞ্চে এসে কুরআন পড়েছেন। তিনি বলেছেন, এই মঞ্চের বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়েদের যারা নাস্তিক বলছে, তার প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এটা করেছেন।”