উপহারে অনিয়মের মামলায় এরশাদ খালাস

রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপহার দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের সাজার রায় বাতিল করে তাকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2017, 10:10 AM
Updated : 9 May 2017, 12:49 PM

মঙ্গলবার বিচারপতি মো.  রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চ দুই যুগের পুরনো এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করে।

প্রায় দুই কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ১৯৯২ সালে জজ আদালত এরশাদকে তিন বছর সাজা দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের আপিল মঞ্জুর করেছে হাই কোর্ট।

এরশাদের সাজা বাড়াতে এবং মামলার এক সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল হাই কোর্টে খারিজ হয়ে গেছে।  

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের মর্যাদায় রয়েছেন। বিএনপিবিহীন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায় আছেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।

রায়ের পর এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারিকে আদালত যে রায় দিয়েছিল সেটা খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল ছিল, সেগুলোও খারিজ হয়ে গেছে।”

এ মামলায় এরশাদ তিন বছর সাজা খেটে ফেলেছেন- এ বিষয়ে আদালত রায়ে কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে তার আইনজীবী বলেন, “সেটা অন্য জিনিস। এ বিষয়ে আগে আমরা রায় দেখব, তারপর এরশাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এই মুহূর্তে কোনো কমেন্ট করব না।”

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “আমি মনে করি, এটি একটি অদ্ভুত রায় হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচিৎ।”

তিনি বলেন, “১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করেন। আর অর্থ উদ্ধার করা হয় ২৫ ডিসেম্বর। এরশাদকে খালাস দিলেও আদালত বলেছে, ওই এক কোটি ৯০ লাখ টাকা জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ। এটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে থাকবে।”

খুরশীদ আলম বলেন, রায় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কমিশনকে তা অবহিত করেছেন। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলেই তারা আপিল করবেন।

মামলা বৃত্তান্ত

১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এরশাদের বিরুদ্ধে।

ওই অভিযোগে ১৯৯১ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দিন আহমেদ সেনানিবাস থানায় এরশাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় এক কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৫ টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।

১৯৯২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত এরশাদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। একইসঙ্গে ওই অর্থ ও একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন এরশাদ। ২০১২ সালের ২৬ জুন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে এরশাদের আপিলে পক্ষভুক্ত হয় দুদক।

গত ৯ মার্চ হাই কোর্টে এ মামলায় আপিল শুনানি শেষ হলে ২৩ মার্চ রায়ের দিন রাখা হয়। কিন্তু এরশাদের সাজা বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল অনিষ্পন্ন থাকায় সেদিন আর রায় না দিয়ে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস মামলার সব ফাইল পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতির কাছে।

পরে প্রধান বিচারপতি তিনটি আপিল একসঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো.  রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চে পাঠান। এই বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শেষে গত ১২ এপ্রিল রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দেয়।

১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন অভিযোগে ৪২টি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তার সাজার আদেশ হয় এবং একটিতে তিনি সাজা খাটা শেষ করেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দেন, তাতে তখনও আটটি মামলা থাকার কথা বলা ছিল।

এর মধ্যে পাঁচটির কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। রাডার দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে এরশাদ খালাস পেয়েছেন। জজ আদালতে থাকা মঞ্জুর হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত চলছে। আর উপহার দুর্নীতির মামলায় হাই কোর্ট থেকে খালাস পেলেন এরশাদ।