‘অশনি সংকেত’ দেখছে বিএনপি

পদ্মাসেতু মামলায় বিশ্ব ব্যাংকের হারের পর ঋণদাতা এই সংস্থাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব‌্যে ‘অশনি সংকেত’ দেখছে বিএনপি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2017, 11:07 AM
Updated : 17 Feb 2017, 03:53 PM

ঢাকার বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের কার্য্ক্রম এবং তাদের ১৬টি গাড়ির বিষয়ে তদন্ত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী থেকে শুরু করে দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতারা যেভাবে বক্তব্য রাখছেন, তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অশনি সংকেত; যা দেশের জন্য শুভ নয়, অশুভ। এতে দেশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে।”

তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ’ সরকারের নির্দেশেই শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ১৬ কর্মকর্তার নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুতে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন থেকে চার বছর আগে বিশ্ব ব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর নিজস্ব অর্থায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ওই ষড়যন্ত্রের অভিযোগের বিচারের রায়ে শুক্রবার কানাডার আদালত কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানায়।

এই রায়ের পর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফেইসবুকে লেখেন, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশে যারা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কথা বলে ‘গলা চড়িয়েছিল’, তাদের এখন সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত

কিন্তু রায়ের পরও বিশ্ব ব্যাংকের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি মন্তব‌্য করে রিজভী বলেন, “ঢাকা অফিসে এতো কিছুর পরও বিশ্ব ব্যাংক তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তারা যে অভিযোগ করেছিল পদ্মাসেতু নিয়ে, সেই অভিযোগের বিষয় থেকে সরে আসেনি।”

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিশ্ব ব্যাংক স্বল্প সুদে বাংলাদেশকে ঋণ দেয়। বাংলাদেশে এখনো বিশ্ব ব্যাংকের ‘হাজার হাজার কোটি টাকা কাজ’ চলমান। দেশের অকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতে তাদের বড় বড় প্রকল্প রয়েছে।

“কানাডার আদালতের রায়ের পর বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতাদের লম্ফ-ঝম্প ও দাম্ভিক উক্তির কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এই সংস্থার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এতে করে দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে সংকট সৃষ্টি হতে পারে।”

রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে দেশ ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ‌্যে’ পরিণত হয়েছে। ‘এমন কোনো খাত নেই’ যেখানে দুর্নীতি নেই। ‘লুট করে’ দেশের সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ফোকলা’ করে ফেলা হয়েছে। শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ-কোটি টাকা ‘লোপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও আত্বীয়-স্বজনরা।

“শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীনরা হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে থেকে পাচার করে সুইস ব্যাংক ভরে ফেলেছে। কানাডায় বাড়ি তৈরি করেছে, মালয়েশিয়ায় সুরম্য ভিলা বানিয়েছে। তারাই এখন নিজেদেরকে সাফসুতরো হিসেবে জাহির করে উচ্চস্বরে চিৎকার করছেন।”

‘দখলের প্রতিধ্বনি’

‘খালেদা জিয়ার জন্য নির্বাচন ও সংবিধান বসে থাকবে না’- আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব‌্যের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমি তাকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই ধরনের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে সুখের ইন্ধন দিতে পারে, কিন্তু জনগণের মধ্যে তার এই বক্তব্য বড় ধরণের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

“তার বক্তব্যে যে ষড়যন্ত্র আর অশুভ পরিকল্পনার স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে, তা হৃদয়াঙ্গম করতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই বক্তব্য দখলের প্রতিধ্বনি।”

বিএনপি ‘নির্বাচনে আস্থাশীল’ একটি দল দাবি করে রিজভী বলেন, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন ‘হতে পারবে না’।

“সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন করার কোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে।”

‘ফেনী স্টাইলের আলমত’

আগামী ৬ মার্চ পাবনার সুজানগরে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেনের বাড়িতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “গতরাতে (বৃহস্পতিবার) চারটি মাইক্রোস ও মোটরসাইকেল বোঝাই করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজারি জাকির হোসেনের বাসায় হামলা চালায়। বাসায় তাকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা ভাংচুর চালায় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।”

শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন জাকিরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে জন‌্য চাপ দিতেই তার বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে বিএনপি নেতা রিজভীর দাবি।  

“সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে গেছে, যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেখে নেওয়া হবে। এটাই হচ্ছে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের কতৃত্বে নির্বাচন শুরু হওয়ার দৃষ্টান্ত। ফেনী স্টাইলের আলমত শুরু হয়ে গেছে।”

এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন‌্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. শাহজাদা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।