রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশপ্রাপ্ত সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদাকে ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তি আখ্যায়িত করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় না ছাড়তেই তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
Published : 08 Feb 2017, 03:46 PM
বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “কে এম নুরুল হুদা কে ছিলেন? ১৯৭৩ সালে তিনি কী রাজনীতি করেছেন? আমরা কি আরও ভালো এবং সবার গ্রহণযোগ্য একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঠিক করতে পারতাম না?
“কিন্তু সেটা করা হয়নি। তা না হওয়ার কারণ হচ্ছে একটিই- বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ক্ষমতা না ছাড়া।”
মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা নূরুল হুদার মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাসদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরের ৩০ জুলাই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি দলগুলোর কাছে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের যে নাম চায়, তাতে কোনো একটি ছোট দল থেকে নুরুল হুদার নাম প্রস্তাব করা হয় বলে কমিশন গঠিত হওয়ার পর জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তবে সেই ছোট রাজনৈতিক দলটির নাম বলেননি তিনি।
সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জন থেকে সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পাঁচ সদস্যের যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন তাতে সিইসি নূরুল হুদার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে আছেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
এই চার কমিশনারের মধ্যে কবিতা খানমকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দেওয়া তালিকা এবং মাহবুব তালুকদারকে বিএনপির দেওয়া তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, যে কথা আমরা জনগণকে বলছি- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এটার ভিত্তিতে আমাদেরকে নতুন করে আন্দোলন করতে হবে।
“সেই আন্দোলন রাস্তায় করতে না পারি, সেই আন্দোলন টেলিভিশনে করব, সেই আন্দোলন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে করব, সেই আন্দোলনে ১০ জনকে নিয়ে সত্য কথাটা বলব। এই সত্য কথা বলার অভাব আজকে অনুভব করছি।”
এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।
পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ। ‘ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের ৬০ বছর পূর্তিতে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর গুরুত্বপূর্ণ চিঠি ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের সভাপতি পেশাজীবী নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উদ্যোগে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জসিমউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, ছড়াকার আবু সালেহ, ডিএলর সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বক্তব্য রাখেন।
এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত এক মানবন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুও নতুন সিইসি নিয়োগের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “গত পরশু একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সিইসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই বিতর্কিত ব্যক্তি দিয়ে এদেশে আগামীতে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা একজন পাগলেও বিশ্বাস করে না, এদেশের উন্মাদও বিশ্বাস করে না।
“সেই বিতর্কিত ব্যক্তি যিনি কুমিল্লায় ডিসি থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সরকারি অফিস থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। পত্রিকায় খবরটি এসেছে। তিনি জনতার মঞ্চের লোক ছিলেন।”
দুদু বলেন, “শেখ হাসিনার জন্য আমার মায়া হয় যে- তিনি ১৬ কোটি মানুষের মধ্য থেকে বিতর্কহীন ব্যক্তি পেলেন না, যাকে সিইসি করবেন।”
রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ রেখে দুদু বলেন, “এখনো সুযোগ আছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করব, সিইসি ও চার কমিশনার শপথ গ্রহণ করে নাই। আমরা চার নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। সিইসির শপথের আগেই বিবেচনার কোনো সুযোগ থাকলে সেটা বিবেচনা করবেন। বিতর্কহীন একজন ব্যক্তিকে সিইসি করুন।”
সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় এই কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির এবিএম মোশাররফ হোসেন, খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুন রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।