নাম না দিলে গোপনীয়তা ভঙ্গ কীভাবে: কাদের

নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব‌্যে ‘স্ববিরোধিতা’ দেখছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2017, 02:06 PM
Updated : 23 Jan 2017, 02:07 PM

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব‌্যের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি অবাক হয়েছি, গতকাল বিএনপি মহাসচিব স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য একেবারেই স্ববিরোধী।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্ন, যদি বিএনপি সার্চ কমিটিতে বিচারপতি কে এম হাসানের নাম না-ই দিয়ে থাকে, তাহলে গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ আবার কীভাবে তোলে?

নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি বক্তব‌্য চলছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিবের মধ‌্যে।

নিরপেক্ষ ইসি না হলে মানা হবে না বলে বিএনপি নেতাদের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় রোববার এক সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখতে নাম প্রস্তাব করেছেন। সেই হাসান সাহেব কি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন না? তাহলে কোনটা পক্ষ, কোনটা নিরপেক্ষ?”

রাষ্ট্রপতির সংলাপে নতুন ইসি গঠনে নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব বিএনপি দিলেও সার্চ কমিটিতে রাখতে সুনির্দিষ্ট কোনো নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিএনপির নেতারা মুখ খোলেননি।

ওবায়দুল কাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নাম প্রস্তাবের কথা প্রকাশের পর ফখরুল তার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতিকে বলা কথা ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক কীভাবে জানলেন?  

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব‌্য ‘সর্বৈব মিথ‌্যা’।

তার ওই বক্তব‌্য ধরে সোমবার বিকালে পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপির প্রস্তাব পাঠিয়েছে একজন ব্যক্তির নাম উদ্ধৃত করে। এটা বঙ্গভবনের সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের যোগসাজশে হয়েছে এবং এতে গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়েছে বলেন তিনি অভিযোগ করেছেন।

“আবার তিনিই বললেন, আমরা কে এম হাসানের নাম পাঠাইনি। ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাইনি। আপনি একদিকে বলছেন গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়েছে, আরেক দিকে বলছেন এই নাম পাঠাইনি। তাহলে কী দাঁড়ায়?”

ওবায়দুল কাদের (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

“তিনিই যখন বলেছেন নাম পাঠাইনি, তাহলে গোপনীয়তা ভঙ্গের বিষয় কেন এল? নামই যখন পাঠাননি, তখন গোপনীয়তা কীভাবে ফাঁস হল?” প্রশ্ন রাখেন কাদের।

তিনি বলেন, “আসলে তিনি কথার ফাঁদে আটকে গেছেন। স্ববিরোধী বক্তব্য, আবার আমাকে বলে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে!”

বিএনপির ‘গোপন কথা’ তার দলের নেতারাই গোয়েন্দাদের কাছে ফাঁস করেছেন বলে দাবি করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

“বিএনপির গোপন কথা জানতে আমাদের কি বঙ্গভবনের কাছে গোপনভাবে জানতে হবে? বঙ্গভবনের আশ্রয় নিতে হবে? বিএনপির গোপন কথা বলার জন্য বিএনপিই যথেষ্ট।”

বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে কাদের বলেন, “যাদেরকে নিয়ে সংলাপে গেলেন, তাদের সবাইকে কি আপনি বিশ্বাস করেন মির্জা ফখরুল সাহেব?

“অনেকেরই মামলা আছে তো, জেল-জুলুমের ভয়ে গোয়েন্দাদের কাছে ঘরের কথা পরকে বলে দেন। তো এই সূত্র ধরে তো অনেকেই জানতে পারে তাদের ঘরের কথা। আমার কেন জানতে হবে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “আপনার দলের অফিসে আপনার সামনে একজনে আরেকজনকে ‘সরকারের দালাল’ বলে। নিজেরা নিজেদের আগে বিশ্বাস করুন, স্ববিরোধিতা পরিহার করুন।”

সাংবিধানিক পদগুলোতে দলীয় লোকদের বসানো বিএনপির চর্চা মন্তব‌্য করে কাদের বলেন, “মনে আছে এম এ আজিজের কথা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার? মনে আছে কে এম হাসানের কথা? তিনি তো বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কে এম হাসান সাহেবকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিচারপতিদের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৬৭ করা হয়েছিল।

“এত পেয়ারের লোক বেঁচে থাকতে তাদের চয়েস থাকবে না, এটা কেমন করে হয়।”

নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি তার এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করবেন এবং তাতে সরকারের কোনো বক্তব‌্য থাকবে না বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

“মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের দলের লোক চাই না। আমরা ইলেকশন কমিশনেও চাই না, সার্চ কমিটিতেও আওয়ামী লীগের লোক চাই না। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যে কোনো লোক। আওয়ামী লীগ না হলেও যে কোনো মানুষ, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, এমন যোগ্য লোককে দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটিও করতে পারেন, ইলেকশন কমিশনও গঠন করতে পারেন।”