নতুন কমিটি বেছে নিতে কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যাদেরকে নিয়ে দলের নতুন কমিটি সাজাবেন, তা ঠিক করতে চলছে দলটির কাউন্সিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 04:07 AM
Updated : 23 Oct 2016, 11:21 AM

রোববার সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে পৌঁছানোর পর ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনের কাজ শুরু করেন। মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর এই কাউন্সিলে তাদের মতামত দিচ্ছেন।

শনিবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালের পর এবারই আওয়ামী লীগ দু’দিনব্যাপী সম্মেলন করছে।

১৯৯৭ সালের ৬ ও ৭ মে আওয়ামী লীগের ষোড়শ জাতীয় সম্মেলন হয়। এরপর ২০০২ সালে সপ্তদশ, ২০০৯ সালে অষ্টাদশ এবং ২০১২ সালে উনবিংশতম সম্মেলন একদিনেই হয়েছিল।

নিকট অতীতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শুধু সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। পরে কাউন্সিলররা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষমতা দিয়ে দেন।

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর থেকে টানা ৩৫ বছর আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি তিনি বলেছেন, অবসরে যাওয়ার সুযোগ পেলে ‘খুশি’ হবেন। তবে দলীয় নেতারা বলে আসছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

আর শেখ হাসিনা কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের কথা বললেও দলের নেতারা তার দিকেই তাকিয়ে আছেন।

সম্মেলনের আগে থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। সভাপতির পর সাংগঠনিক দিক দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে গত দুইবারের সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই থাকছেন, না নতুন কোনো মুখ দেখা যাবে- সে প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ‌্যমগুলোতেও।

২০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শনিবার বিকালে রংপুরের কাউন্সিলর হিসাবে কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনা আমাদের শেষ ভরসা। আর এখানে আছেন আরেকজন শেষ ভরসা। তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেবেন।”

যা বললেন কাউন্সিলররা

রোববার সকালে কাউন্সিল শুরুর পর উদ্বোধনী বক্তব্যে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে বলেন।

এরপর সারা দেশের কাউন্সিলররা একে একে মঞ্চে এসে বক্তৃতা দিতে থাকেন।  সজীব ওয়াজেদ জয় কাউন্সিলে আসেন বেলা ১২টার পর।

কাউন্সিলে পাশাপাশি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদের। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের ফেইসবুক থেকে

কাউন্সিলরদের অধিকাংশই শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন এবং অনেকেই জয়কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।  

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, “আমাদের মাঝে আছেন আমাদের নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত রাজনীতি তাকে দিয়েই হবে। জয় ভবিষ্যতে আপনার পাশে থাকবে।”

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, “জয়কে নেতৃত্বের আসনে বসাতে হবে। নেত্রী আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।”

নতুন কমিটি গঠনে নেতীর ওপর আস্থা রাখেন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট।

তিনি বলেন, “আমরা জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চাই। আপনি যে কমিটি করবেন, তার ওপর পূর্ণ আস্থা আছে।” 

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ যোগ্য নেতাকর্মী তৈরিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

“আওয়ামী লীগে প্রশিক্ষীত নেতা কর্মীর বড় অভাব আছে। প্রশিক্ষণ শিবির করা উচিত।”

সভা-সমাবেশে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর নির্দেশ দিতে শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জয়কে যোগ্যতা অনুযায়ী দলীয় পদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ‘গৃহশত্রু’ সম্পর্কেও কথা বলেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ। অতীতে অনেকে অনেককে ‘সাইজ’ করেছেন। নৌকা ছাড়া নির্বাচন করে দেখেন, জামানত থাকে কিনা।”

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, “কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, সেটা আপনি নির্ধারণ করবেন। জয়কে আমরা চাই।”

প্রশাসন থেকে ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের’ দূরে রাখতে ব্যবস্থা নিতে বলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নইম পাটোয়ারী দুলাল।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান বলেন, “যারা আগামী দিনে নির্বাচন করবেন, তারা কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনবেন।”

দুপুর পর্যন্ত আরও বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক নেসার আহমেদ ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরেশী, টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ফারুক, মাদারীপুরের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি জহিরুল হক খোকা, মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দীন, লালমনিরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান।

এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি মতিউর রহমান, রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি দীপংকর তালুকদার, লক্ষ্মীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুদ্দীন চৌধুরী স্বপন, কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি কামরুল আহসান, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ স্বপন, নীলফামারী জেলা সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, গাইবান্ধার সভাপতি সামশুল আলম হীরুও বক্তব্য দেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম ঘোষণা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কিশোরগঞ্জের সভাপতি আমাদের রাষ্ট্রপতি। আমি জানি বঙ্গবভবনে বসে ওনার কেমন লাগছে।”

বেলা ১টা ১০ মিনিটে কাউন্সিল অধিবেশনে বিরতি দিয়ে বেলা আড়াইটায় ফের অধিবেশন শুরু হয়।