রোববার সকালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে তার এই নির্দেশনা আসে।
দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনের কাজ শুরু করেন শেখ হাসিনা।
ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর এই কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য দলের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করবেন।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতেই ২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “সামনে নির্বাচন। জনগণের কাছে যেতে হবে। তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে। উন্নয়নের কথা বলতে হবে।”
আর সেজন্য গত সাত বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
“ব্যাপক প্রচার করতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।”
বিগত সময়ে সরকারে থাকা বিএনপির কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “যারা মানি লন্ডারিং করে, পুড়িয়ে মানুষ মারে, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়, তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।
“ওই লুটেরা দুর্নীতিবাজ, এতিমের টাকা যারা খায়, মানিলন্ডারিং করে, যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা আসলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। তারা জনগণের সম্পদ লুটে খাবে। মানুষকে বোঝাতে হবে এরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তার মানে যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় আসবে, খুনিরা ক্ষমতায় আসবে। এরা ক্ষমতায় আসলে আবার খুনিদের রাজত্ব, দুর্নীতিবাজদের রাজত্ব হবে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি ‘সততা’ দেখতে চান।
“আমি চাই, আমি বেঁচে থাকতে থাকতে নেতা নির্বাচন করে দলকে শক্তিশালী করে যাব।”
এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত কাউন্সিলররা দাঁড়িয়ে সমস্বরে ‘না, না’ বলে ওঠেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ আমার পরিবার। আওয়ামী লীগ আমার আপনজন। আমার সন্তানদের এতো সময় দেই নাই আওয়ামী লীগকে যত সময় দিয়েছি।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখানে বসে তালি বাজালে হবে না। আমাদের অর্জনগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনগণকে বার বার বলতে হবে। আমরা এই কাজ আপনাদের জন্য করেছি। আওয়ামী লীগ করেছে।
“মানুষকে বোঝাতে হবে, সরকারের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে আরও একবার ক্ষমতায় আসতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ তার সুফল পাবে।”
দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরা আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আরও পাঁচ বছরের জন্য দেশ শাসনের দায়িত্ব পায়।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছে দিতে তার সরকারের কর্মসূচি সাজিয়েছেন।
শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ২০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সরকারের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলটির এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’।
কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের সম্পদের পেছনে না ছুটে জনগণকে ভালোবাসার পাশাপাশি, তাদের কল্যাণের জন্য সত্যিকারের আর্দশের কর্মী হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাজই হবে প্রচার করা। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। তাদের কাছে যাওয়া। তাদের এই কথাটা বোঝানো যে আওয়ামী লীগ থাকলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তারা কিছু পাবে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পাবে।
“অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, রাস্তাঘাট উন্নত হবে, পুল-ব্রিজ হবে। ক্ষেতে ফসল উৎপাদন হবে। এই কথাগুলো মানুষের কাছে ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া। আওয়ামী লীগের এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। এ জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা আর জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো, এটাই আমরা আশা করি।”