রওশনকে পেয়ে ‘আনন্দে ভরপুর’ এরশাদ

জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার পর ক্ষেপেছিলেন রওশন এরশাদ, আর তার প্রকাশ ঘটিয়ে স্বামী এইচ এম এরশাদকে ‘গণতান্ত্রিক’ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2016, 02:26 PM
Updated : 1 May 2016, 03:04 PM

কিন্তু তিন দিন আগে এরশাদ যখন ভাইয়ের পদের উপরে তুলে রওশনকে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান করার ঘোষণা দেন, তখনই স্বামী-স্ত্রীর ‘রাজনৈতিক সম্পর্কে’ বরফ ভাঙার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল।

রওশন নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দেখানোর পর রোববার যখন মে দিবসে জাতীয় পার্টির অনুষ্ঠানে এলেন, তখন স্ত্রীকে পাশে পেয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ ছিল না এরশাদের।

এই দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’, ‘কালো মেঘ কাটার দিন’, নতুন  নতুন যাত্রার দিন’- এ রকম নানা নামে অভিহিত করেন নিজেকে কবি হিসেবেও পরিচয় দেওয়া সাবেক এই সামরিক শাসক।

বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের পর থেকে এরশাদ-রওশন সম্পর্কে টানাপোড়েন প্রকাশ্য হচ্ছিল; যদিও দুজনই বলে আসছিলেন, তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই।

রওশন বিরোধীদলীয় নেতা এবং এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে দুজনের পাল্টপাল্টি সিদ্ধান্ত চলতে থাকে জাতীয় পার্টিতে।

এর মধ্যেই গত ১৭ জানুয়ারি এরশাদ রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও উত্তরসূরি ঘোষণা করেন।

তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য রওশনের সমর্থকরা। বনানীতে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এরশাদ সমর্থকদের সক্রিয়তার মধ্যে সংসদকেন্দ্রিক তৎপরতা চলে রওশন সমর্থকদের।

এরশাদ আগামী ১৪ মে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ডাকলে তার বিরোধিতায়ও নামেন রওশন। দলের ‘গঠনতন্ত্র’ মানার আহ্বান জানিয়ে গত ২৪ এপ্রিল রওশন সংবাদ সম্মেলন করলে পাল্টা বক্তব্যে তাকে সংযত হতে বলেন এরশাদ।

এরপর গত ২৭ এপ্রিল নিজের জেলা রংপুরে এক অনুষ্ঠানে রওশনকে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এরশাদ দৃশ্যত সাদা পতাকা দেখান স্ত্রীকে।

ওই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর রোববার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সভামঞ্চে স্বামী এরশাদ এবং দেবর কাদেরের মাঝে বসে কার্যত নিজেও সাদা পতাকা তুললেন রওশন।

অনুষ্ঠানে জি এম কাদের ছাড়াও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি ফিরোজ রশীদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

এরশাদের আগে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে রওশন প্রথমে মে দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং এর তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেন।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “আমাকে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আপনারা কি এটা সমর্থন করছেন? যদি করেন তাহলে আমি এ পদে থাকব, নইলে নয়।”

গত ১ জানুয়ারির পর দলের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে প্রথম একসঙ্গে মঞ্চে পাওয়ার কর্মী-সমর্থকরা হাততালি ও স্লোগান দিয়ে রওশনকে সমর্থন করেন।

এরপর এরশাদ বক্তব্য দিতে উঠে প্রথমেই রওশনকে স্বাগত জানান এই সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য।

উচ্ছ্বসিত এরশাদ এরপর বলেন, “আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। কালো মেঘ কেটে গেছে। সূর্যোদয় হয়ে গেছে। আমার হৃদয় আজ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আমার হৃদয় আজ আনন্দে ভরপুর। এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই।

“আমার স্ত্রী অনেক কথা (মে দিবস প্রসঙ্গে) বলেছেন। আমি বেশি কথা বলতে চাচ্ছি না।  উনি আসাতে খুব খুশি হয়েছি। আজ থেকে আমরা এককভাবে জাতীয় পার্টি করব। আমরা ঐক্যবদ্ধ, একসাথে থাকব ইনশাল্লাহ। আজ থেকে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হল।”

কাকরাইলে জাতীয় পার্টির এই কার্যালয়টি নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। রোববারই প্রথম ওই কার্যালয়ে পা রাখলেন রওশন।

দলের মধ্যে ‘ঐক্যে’ খুশি হলেও দেশের অবস্থা ‘ভালো’ দেখছেন না বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ।

“দেশের অবস্থা ভালো নয়। সরকারের পক্ষে কি ঘরে ঘরে পুলিশ দেওয়া সম্ভব? আর একটা কথা হল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি একটি জাতীয় সঙ্কট। এই সঙ্কট মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ দায় সরকারের একার নয়, আমাদের সবার।”

চলমান ‘বালা-মুসিবত’ থেকে উদ্ধারে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের ধারা রক্ষা করতেই এটা করা প্রয়োজন।”