ওলামা লীগের আবদার

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে কড়াকড়ি আরোপের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ওলামা লীগ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2016, 09:10 AM
Updated : 9 April 2016, 10:41 AM

এবার থেকে চালু হওয়া বৈশাখী উৎসব ভাতা বাদ দিয়ে ঈদ-ই মিলাদুন্নবিতে উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠনটির নেতারা।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বলে ওলামা লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “পহেলা বৈশাখের নামে চারুকলার গাঁজাখোর মিডিয়া ও পুঁজিবাদী বেনিয়াগোষ্ঠি বাণিজ্য করছে। ওদের শোষণ থেকে জনগণকে বাঁচাতে হবে।”

মুসলমানদের ‘ইসলামহীন’ করার জন্যই পহেলা বৈশাখের ‘অপতৎপরতা’ বলে দাবি করেছে ওলামা লীগ, যে সংগঠনটি আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে বলে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের দাবি।

ওলামা লীগ স্বীকৃত সহযোগী সংগঠন নয় বলে আওয়ামী লীগ দাবি করলেও এই সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলের নেতাদের অংশগ্রহণ দেখা যায়। তেমনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যায় সংগঠনটির ব্যানারসহ উপস্থিতি।

হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী বিভিন্ন সংগঠনের সমরূপ দাবি তুলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারও সমালোচনার মধ্যে রয়েছে ওলামা লীগ। নিজেদের কোন্দলে রাজপথে মারামারি নিয়েও সমালোচিত সংগঠনটি।

ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরীর পাঠানো শনিবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, তারা আওয়ামী লীগ ‘সমর্থিত’ সমমনা ১৩টি ইসলামিক সংগঠন মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করেন।

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এবারের বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান বিকালের মধ্যে শেষ করা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। 

সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হলেও মুখোশ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেওয়ায় সরকারকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছে ওলামা লীগ। বৈশাখ উপলক্ষে ‘পান্তা-ইলিশ’ খাওয়ার চর্চা বাদ দিয়ে ‘জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষা’র আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক কর্মসূচিতে ওলামা লীগের শরীয়তপুরী নেতৃত্বাধীন অংশের নেতারা (ফাইল ছবি)

ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন ‘উৎসব ভাতা’ দেওয়ার দাবি জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রয়েছে। এজন্য মুসলমানদের পহেলা বৈশাখের বোনাস বাদ দিয়ে মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ উপলক্ষে বোনাস দেওয়া উচিত।”

বৈশাখের বিরোধিতা করলেও নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠানে হামলার বিরোধিতাও করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠনটি।  

সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী হামলাকে ‘অনৈসলামিক ও হারাম’ আখ্যায়িত করে বক্তারা বলেন, পহেলা বৈশাখে সন্ত্রাসী হামলা ‘ইসলামে জায়েজ নেই’।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি

মানববন্ধনে বক্তারা ‘আইনপ্রণেতাদের অজ্ঞতার কারণে আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে’ বলে বক্তব্যের জন্য প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগও দাবি করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বক্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪ এপ্রিল বলেছেন, কীভাবে আইন প্রণয়ন হয় প্রধান বিচারক জানেন কি-না, জানি না।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে প্রমাণিত হয় প্রধান বিচারক অজ্ঞ। তাই তার পদত্যাগ করা উচিত।”

মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান বিচারপতি নিয়েও আপত্তি জানান সরকার সমর্থক এই সংগঠনটির নেতারা।

মানববন্ধনে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’কে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ অ্যাখ্যা দিয়ে এটি সংশোধনের দাবিও জানান বক্তারা।

“শিক্ষামন্ত্রী আওয়ামী লীগের কাঁধে চড়ে তার নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা দর্শন ৯৮ ভাগ মুসলমানের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এতে করে ধর্মপ্রাণ মানুষরা আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যে সুযোগ নিচ্ছে জামাত জোট।”

মানববন্ধনে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন’ বাতিল করার দাবিও জানানো হয়।