তনুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে নাজিমকে খুন: ইমরান

সেনানিবাসে সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে খুন করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2016, 03:30 PM
Updated : 7 April 2016, 06:23 PM

সিলেটের গণজাগরণকর্মী নাজিম খুনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে এক সমাবেশে নিজের এই সন্দেহের কথা প্রকাশ করে ইমরান বলেছেন, দেশে অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার নতুন মডেল তৈরি হয়েছে।

কুমিল্লা সেনানিবাসে তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে গণজাগরণের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার রাতে পুরান ঢাকার সুত্রাপূরে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমকে।

ইমরান বলেন, “শুধু নাজিমুদ্দিন সামাদই নন, কিছুদিন আগে খুন হয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার যাজক। একটির পর একটি ঘটনা ঘটে চলছে।

“সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে যখন সারাদেশের মানুষ সোচ্চার, তখনই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আগের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হল।”

অনলাইনে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন, এমন কয়েকজনকে গত বছর হত্যা করা হয়। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন দুজন বিদেশি এবং ধর্মযাজকরাও। এসব হত্যাকাণ্ড জঙ্গিদের কাজ বলেই সন্দেহ পুলিশের।

কুমিল্লা সেনানিবাসে গত ২০ মার্চ খুন হন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেনের মেয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু। ১৭ দিনেও তার খুনি শনাক্ত না হওয়া এবং ময়না তদন্তে ধর্ষণের আলামত না মেলায় ঘটনাটি ধামাচাপার সন্দেহ করছেন অনেকে।

সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ সমালোচনা করে ইমরান বলেন, “অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার এক নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। প্রতিটি খুনের পর বলা হচ্ছে অপরাধীরা ‘আল্লাহু আকবার' স্লোগান দিয়ে পালিয়ে গেছে। একটা সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে দেখিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে।

“জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মীয় স্লোগানের কথা তুলে দুটি পক্ষ তৈরি করা হচ্ছে, একপক্ষ আরেকপক্ষকে দোষারোপে ব্যস্ত থাকছে, আর এই ফাঁকে সরকারি লোকজন ব্যস্ত রিজার্ভ লুটে। অপরাধীদের আর বিচার হচ্ছে না।”

বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেইসবুক পাতায়ও লিখেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ইমরান।

“সেই পুরনো বিভাজন! কিছু লোক খেয়ে না খেয়ে ইসলাম আর মুসলমানদের উদ্ধার করা শুরু করল, কিছু লোক নাস্তিক মারা গেল বলে রব তুললো! আর অন্যদিকে হাওয়া হয়ে গেলো মানুষের অধিকারের লড়াইগুলো, লুটপাটের বিরুদ্ধে লড়াইগুলো, চলমান সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধের লড়াইগুলো। সবকিছু আড়াল করা কত সহজ, তাই না? এই খেলা আর কতদিন বাংলাদেশ?”

একটির পর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার জন্য আগের খুনের বিচার না হওয়াকেই দায়ী করছেন ইমরান। 

সমাবেশে তিনি বলেন, “ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারাদেশে যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময়েও বাসের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অপরাধীদের ধরার কোনো চেষ্টা না করে প্রশাসন বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছে।

“দেশে যে শাসন চলছে, তা কোনোভাবেই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার শাসন নয়। প্রশাসন যদি দাবি করে থাকে যে জঙ্গিগোষ্ঠী এই খুন করেছে, তাহলে খুনিদের গ্রেপ্তার করে তারপর তাদের প্রমাণ করতে হবে কারা জড়িত।”

.

একের পর এক খুনের জন্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে ইমরান বলেন, “আপনারা একদিন আনসারুল্লাহ, একদিন অমুক, একদিন তমুককে দায়ী করে ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন, অপরাধীদের ধরায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

“তাই আমাদের সন্দেহ জাগে, এই হত্যার পেছনে এমন কেউ আছে, যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কালো চশমা পরে আছে। তাই নাজিমুদ্দিন হত্যার দায় সরকারের উপরেই বর্তায়।”

“নাজিমুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলত। তারপরও রিজার্ভ লুট, তনু ধর্ষণ আর হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে খুন হতে হল।”

ওলামা লীগের বিরুদ্ধে নাজিমুদ্দিনের কথা বলার বিষয়টি উল্লেখ করে গণজাগরণের মুখপাত্র বলেন, “নাজিমুদ্দিন সরকারি দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তারপরও শুধু অন্যায়ের সাথে আপস না করায়, ওলামা লীগের বিরুদ্ধে বলায় তাকে খুন হতে হল।

“তাই আমাদের সন্দেহ হয়, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, না কি ওলামা লীগ?”

ধর্মীয় রাজনীতির বিরোধিতাকারী আওয়ামী লীগের ওলামা লীগকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইমরান।

“ওলামা লীগের বিরুদ্ধে কেন তারা কথা বলেন না? সরকার ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ওলামা লীগের চেতনায় প্রবেশ করছে।”

বাংলাদেশে এখন অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের টার্গেট করে খুন করা হচ্ছে মন্তব্য করে তা রুখে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তনু, নাজিমুদ্দিনসহ সব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে শাহবাগে সংহতি সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন ইমরান।

সমাবেশে মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূল, উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, ব্লগার বাকি বিল্লাহ, প্রকৌশলী শম্পা বসু, ভাস্কর রাশা বক্তব্য দেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মশাল মিছিল বের করেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।